• ২৭শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১২ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২৫শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন : সিলেটজুড়ে আওয়ামী লীগে পরাজয়ের ধাক্কা

Daily Jugabheri
প্রকাশিত নভেম্বর ৩০, ২০২১
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন : সিলেটজুড়ে আওয়ামী লীগে পরাজয়ের ধাক্কা

যুগভেরী রিপোর্ট
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে সিলেট বিভাগে একের পর এক ধাক্কা খেয়ে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। একদিকে দলীয় শৃঙ্খলা অভাব, নেতাদের নির্দেশ মানছেন না তৃণমূল নেতা-কর্মীরা; অন্যদিকে দল মনোনীত প্রার্থীদের ভরাডুবি ঘটছে। এরওপর আবার দলীয় নির্দেশ অমান্য করা অনেকেই জয়ী হয়ে যেন আওয়ামী লীগের ‘কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা’ দিচ্ছেন!
দেশে তৃতীয় ধাপে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন হয়ে গেল গতকাল রোববার (২৮ নভেম্বর)। এ নির্বাচনে সিলেট বিভাগের চারটি জেলার ৭৭টি ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ হয়। ভোটে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা অর্ধেক ইউনিয়নেও জয়ী হতে পারেননি। ৩১টিতে নৌকা প্রতীক বিজয়ী হয়েছে। আওয়ামী লীগের শৃঙ্খলা ভেঙে প্রার্থী হওয়া ২০ জন হেসেছেন শেষ হাসি। বাকি ২৬টি ইউনিয়নে অন্যান্য দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। স্বতন্ত্র বিজয়ীর মধ্যে বিএনপির বেশ কয়েকজন তৃণমূল নেতা রয়েছেন।
প্রথম ধাপের ইউপি নির্বাচনে সিলেটের কোনো ইউনিয়ন পরিষদ ছিল না। গত ১১ নভেম্বর দেশে দ্বিতীয় ধাপে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে সিলেটের ৪৪টি ইউনিয়নও ছিল। এর মধ্যে একটি ইউনিয়নে গ-গোলের কারণে ফলাফল স্থগিত হয়। বাকি ৪৩টির মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীরা ১৯টিতে নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা জয় পান ১০টিতে। বাকিগুলোর মধ্যে ১টিতে খেলাফত মজলিসের প্রার্থী, ২টিতে জামায়াতের প্রার্থী এবং ১১টিতে বিএনপি নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে বিজয়ী হন।
দ্বিতীয় ধাপের ওই নির্বাচনে বেশিরভাগ ইউপিতে দলীয় প্রার্থীদের পরাজয়ের পর তৃতীয় ধাপে আরও আঁটঘাট বেঁধে মাঠে নামে আওয়ামী লীগ। কিন্তু এ ধাপেও দমানো যায়নি বিদ্রোহীদের, সিংহভাগ ইউপিতে পরাজয় মানতে হয়েছে দলীয় প্রার্থীদের।
তৃতীয় ধাপের সিলেট জেলার ১৬টি, সুনামগঞ্জের ১৭টি, মৌলভীবাজারের ২৩টি এবং হবিগঞ্জ জেলার ২১টি ইউনিয়নে নির্বাচন। এসব ইউনিয়নের বেশিরভাগেই বিদ্রোহীদের নিরস্ত করতে পারেনি আওয়ামী লীগ। সিলেট জেলায় ১৪ জন, সুনামগঞ্জে ২৮ জন, মৌলভীবাজারে ২৪ জন এবং হবিগঞ্জে ১৮ জন মিলিয়ে দলটির ৮৪ জন বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন প্রতিদ্বন্দ্বিতায়।
বিশ্লেষকদের মতে, তৃতীয় ধাপে ৭৭টি ইউনিয়নের মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা অন্তত ৫০টিতে বিজয়ীর হাসি হাসতে পারতেন, যদি না বিদ্রোহীরা মাঠে থাকতেন। বিদ্রোহী প্রার্থীরা ২০টি ইউনিয়নে জয় পেয়েছেন। এঁরা প্রার্থী না হলে এসব ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের জয়ী হওয়ার সিংহভাগ সম্ভাবনা ছিল।
দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপ মিলিয়ে সিলেট বিভাগের ১২০টি ইউনিয়নের মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন ৫০টিতে। দলটির বিদ্রোহীরা জয়ী হয়েছেন ৩০টি ইউনিয়নে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সিলেট বিভাগে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ছাড়া অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর ভিত্তি মজবুত নয়। এবার নির্বাচনে বিএনপি ছিল না। ফলে প্রায় শতভাগ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের জয়ের সুযোগ ছিল না। কিন্তু ক্ষমতাসীন দলটি সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি। অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, বিশৃঙ্খলা, প্রার্থী বাছাইয়ে পক্ষপাতিত্ব, অযোগ্যদের মনোনয়ন প্রদান প্রভৃতি কারণে সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে আওয়ামী লীগের।
তৃতীয় ধাপের ফলাফল বলছে, সিলেট জেলার ১৬টি ইউনিয়নের মধ্যে ৯টিতে আওয়ামী লীগ, ৩টিতে দলটির বিদ্রোহী, ২টিতে স্বতন্ত্রের মোড়কে বিএনপি, ১টিতে জাতীয় পার্টি ও ১টিতে জাসদের প্রার্থী জয় পেয়েছেন।
সুনামগঞ্জের ১৭টি ইউনিয়নের মধ্যে মাত্র দুটিতে জয় পেয়েছে নৌকা প্রতীক। ৫টিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী, ২টিতে জাতীয় পার্টি, ১টিতে জমিয়ত ও ৯টিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বিজয়ীর হাসি হেসেছেন।
মৌলভীবাজারের ২৩টি ইউপির মধ্যে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়েছে ১২টিতে। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীরা ৭টিতে, স্বতন্ত্র থেকে বিএনপি নেতারা দুটিতে এবং অপর দুটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন।
হবিগঞ্জের ২১টি ইউনিয়নের মধ্যে ৮টিতে নৌকা প্রতীক জয় পেয়েছে। পাঁচটিতে জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীরা। বাকিগুলোতে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয় পেয়েছেন।
সামগ্রিক ফলাফল নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ সিলেট আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীলরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলটির এক নেতা বলেন, ‘সামনে আরেকটি জাতীয় নির্বাচন আছে। সে নির্বাচনের আগে যদি তৃণমূলে শৃঙ্খলা ফেরানো না যায়, তবে পরিণতি খারাপ হতে পারে। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে দ্রুত এ বিষয়ে ভাবতে হবে।’

সংবাদটি শেয়ার করুন