যুগভেরী ডেস্ক ::: আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে সাইবার অপরাধ। নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পাহাড় সমান অভিযোগ থাকলেও মামলার সংখ্যা কম। তবে সাইবার নিয়ে কাজ করেন পুলিশের এমন ইউনিটগুলো প্রায়ই সাইবার অপরাধীদের গ্রেপ্তার করছে। তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসছে। কিন্তু প্রতিনিয়ত নতুন নতুন অপরাধী সৃষ্টি হওয়াতে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে এই অপরাধ। গত ২৮শে অক্টোবর শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে নাম পরিবর্তন করে অন্যের নামে সনদ তৈরির ঘটনা ফাঁস হয়। ডিবি’র সাইবার টিম সনদ জালিয়াতিতে জড়িত সাতজনকে গ্রেপ্তার করে।
বাংলাদেশি নারীদের বিয়ে করে প্রতারক হিসেবে তৈরি করছে একদল নাইজেরিয়ান নাগরিক। পরে এসব নারীকে ব্যবহার করে নিত্য নতুন কৌশলে প্রতারণা করছে মানুষের সঙ্গে। হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। এ ছাড়া পুলিশের মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) নামে, মন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) পরিচয়ে প্রতারণা, পাত্রী চাই বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারণাসহ নানা ধরনের অপরাধ প্রতিনিয়তই ঘটছে। এ বিষয়ে গোয়েন্দা সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ সূত্র জানায়, তথ্য চুরি-বিকৃতি, প্রতারণা, ব্ল্যাকমেইল, অর্থ চুরি, জাল-জালিয়াতি, পর্নোগ্রাফি, গুজব ছড়ানোসহ অন্তত ১১ ধরনের সাইবার অপরাধ ঘটছে। চলতি বছরের মার্চ মাসে যাত্রা শুরু করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম ডিভিশনের গত ৯ মাসের একটি বিস্তারিত পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়।
যেখানে ফেসবুক হ্যাকিংসহ অন্যান্য হ্যাকিংয়ের ঘটনায় ১৪টি মামলা হয়েছে, যার মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ৭টি। অনলাইন হ্যারেসমেন্ট, মানহানিকর মিথ্যা তথ্য প্রচারের ঘটনায় ২৯টি, মোবাইল ব্যাংকিং সংক্রান্ত প্রতারণায় ৪২টি, অনলাইন প্রোডাক্ট ক্রয় সংক্রান্ত প্রতারণায় ৪টি, পারসেল ফ্রড-নাইজেরিয়ান ফ্রড মামলা ৪টি, অনলাইন ব্ল্যাকমেইলিং ২টি, অনলাইন ব্যবহার করে মোবাইল ব্যাংকিংসহ অন্যান্য প্রতারণায় ২৩টি, পর্নোগ্রাফি ধারণ ও প্রচার মামলা ১৮টি, ধর্মীয় উস্কানিমূলক প্রচারণায় ৭টি, গুজব রটানো, রাষ্ট্রবিরোধী মিথ্যা প্রচারে ২১টি এবং অন্যান্য সাইবার অপরাধে ৭টিসহ মোট ১৭১টি মামলা হয়েছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সাইবার সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট, পর্নোগ্রাফি আইন, টেলিকমিউনিকেশন আইনে সারা দেশে ২০১৫ সালে যেখানে ৬৩৮টি মামলা হয়েছে, সেখানে ২০২০ সালে এসে এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৪৫৯টিতে।
পুলিশ সদর দপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২০ সালের ১৬ই নভেম্বর পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন সার্ভিসের চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত ১৭ হাজার ২৮০ জন ভুক্তভোগী নারী অভিযোগ করেছেন। এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট ৮ হাজার ২২১ জন ভুক্তভোগী নারীর অভিযোগের বিষয়ে প্রযুক্তিগত ও আইনি সহায়তা দিয়েছে এই ইউনিটটি। এ ছাড়া, সাইবার স্পেসে হয়রানির শিকার ১২ হাজার ৬৪১ জন ভুক্তভোগীর মধ্যে মাত্র ১২ শতাংশ জিডি বা মামলা করেছেন। এর মধ্যে মাত্র ১৩ শতাংশ ভুক্তভোগী অভিযুক্তের পরিচয় ও অবস্থান শনাক্ত করে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।
মহানগর গোয়েন্দা সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার শরিফুল ইসলাম বলেন, অধিকাংশ ভুক্তভোগী সামাজিক অবস্থানের কথা চিন্তা করে মামলা করতে চান না। এক্ষেত্রে তারা সাধারণত মিউচ্যুয়ালি কন্টাক্টের মাধ্যমে আনইশৃঙ্খলাবাহিনীর সহায়তায় সমাধান করতে চায়। ভুক্তভোগীরা উদ্যোগী না হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এ বিষয়ে অ্যাকশন নেয়ার সুযোগ খুব কম। আমরা চাই মামলা হোক। এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (অপারেশন ও প্ল্যানিং) হায়দার আলী খান বলেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ভুক্তভোগী হয়রানি ও সামাজিক সম্মানের কথা ভেবে এসব বিষয়ে মামলা করে না। মামলা না হওয়ার দুটি মূল কারণের মধ্যে প্রথমত, ঘটনাটি জানাজানি হয়ে যাবে এই ভয়ে। আদালতে দাঁড়াতে হবে। দ্বিতীয়, অনেক ভুক্তভোগী দেশের বাইরে থাকায় তারা মামলা করতে আগ্রহী হয় না।
মানবজমিন