জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন
সদ্য শেষ হওয়া সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এবার আরও একজন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও প্রিসাইডিং কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ভোট জালিয়াতির অভিযোগ তুলেছেন সংরক্ষিত মহিলা সদস্য প্রার্থী। পূর্ব পরিকল্পিতভাবে প্রার্থীর এজেন্টদের বের করে জালিয়াতির মাধ্যমে নিজেদেরর পছন্দের প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে বলে অভিযোগ নির্বাচনে পরাজিত এ প্রার্থীর।
রোববার (৯ জানুয়ারি) বিকেলে সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ তুলেছেন উপজেলার ২নং বীরশ্রী ইউনিয়নের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য প্রার্থী মোছা. বেদানা বেগম। নজিরবিহীন জালিয়াতি ও বিতর্কিত এই নির্বাচনের বেসরকারি ফলাফল বাতিল করে পূনরায় তফসিল ঘোষণা করে নতুন করে ভোট গ্রহণের দাবি জানান তিনি।
এর আগে গত বুধবার (৫ জানুয়ারি) পঞ্চম ধাপে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তিনি ২ নং বীরশ্রী ইউনিয়নের ৭, ৮ ও ৯নং সাধারণ ওয়ার্ডের সমন্বয়ে গঠিত সংরক্ষিত ৩নং মহিলা ওয়ার্ডের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে বেদানা বেগম বলেন, ২নং বীরশ্রী ইউনিয়ন নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. রাজীব চক্রবর্তী। তার যোগসাজেশে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসাররা পুরো ইউনিয়নে নজিরবিহীন ভোট জালিয়াতি ও কারচুপির মাধ্যমে পছন্দের প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করে জকিগঞ্জের ইতিহাসে একটি কলঙ্কজনক অধ্যায় রচনা করেছেন। যা নির্বাচন কমিশনকেও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
সংরক্ষিত মহিলা সদস্য প্রার্থী বেদানা বেগম বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকার সোনাপুর সুপ্রাকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার ও হাফসা মজুমদার মহিলা ডিগ্রী কলেজের প্রভাষক মো. রোকন উদ্দিন ভোটের দিন সকালে আমাদের জানান- এ কেন্দ্রে ২০০টি ব্যালেট পেপার না আসায় ব্যালেট পেপার ফটোকপি করে ভোটগ্রহণ করতে হবে। প্রিসাইডিং অফিসারের এমন বক্তব্যের তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ করলে তিনি দুঃখ প্রকাশ করে নানা সমস্যা কথা তুলে ধরে ভোটগ্রহণ শুরু করেন। বিকেলে প্রতিটি ভোট কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা প্রিসাইডিং কর্মকর্তার নির্দেশে আমার এজেন্টদের বের করে দিয়ে দরজা বন্ধ করে ভোট জালিয়াতি ও ভোট কারচুপির মাধ্যমে ফলাফল ঘোষণা করে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করেন।
তিনি আরও বলেন, আমার সংরক্ষিত ওয়ার্ডের শহীদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গুরুসদয় উচ্চবিদ্যালয় ও সোনাপুর সুপ্রাকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এই তিনটি কেন্দ্রে নজিরবিহীন ভোট জালিয়াতি ও কারচুপি হয়েছে। এই ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা রিটার্নিং কর্মকর্তা উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. রাজীব চক্রবর্তীর যোগসাজেশে প্রতিটি কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসাররা এই অপকর্মের সাথে জড়িত।
বেদানা আরও বলেন, এই নির্বাচনে সকল যোগ্য প্রার্থীকে ভোটাররা ভোট দিয়েছেন। কিন্তু ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের জালিয়াতির কারণে যোগ্য প্রার্থীরা বঞ্চিত হয়েছেন। ২নং বীরশ্রী ইউনিয়নে রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ প্রিসাইডিং অফিসাররা পরিকল্পিতভাবে আমার ফলাফল পাল্টে আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নন্ধা রানী শর্শ্মাকে বিপুল ভোটে বেসরকারিভাবে বিজয়ী ঘোষণা করেন। বিতর্কিত ও লোমহর্ষক এই নির্বাচনে আমি চরম অবিচারের শিকার হয়েছি।
বেদানা বলেন, যে নির্বাচনে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্ণিং কর্মকর্তা সিলমারা ব্যালটসহ পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন সেই উপজেলায় ভোট কোনোভাবেই সুষ্ঠু হওয়ার কথা না। উপজেলার সকল ইউনিয়নেই এভাবে ভোট জালিয়াতি হয়েছে।
ভোট জালিয়াতির সাথে জড়িত থাকা সকল রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ভোট কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা সকল প্রিসাইডিং অফিসারদের নির্বাচনের দিনের কার্যক্রম তদন্তপূর্বক চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানান তিনি। একই সাথে বিতর্কিত এ নির্বাচন স্থগিত করে পুণরায় তফশিল ঘোষণা করে নতুন করে ভোট গ্রহণের দাবিও জানান তিনি। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বেদানা বেগমের মেয়ে অ্যাডভোকেট সানজিদা আক্তার লিপা।