গোলাপগঞ্জ প্রতিনিধি : গোলাপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের উপনির্বাচনে ঢাকাদক্ষিণ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ ভোটকেন্দ্রে সংঘর্ষে ১ জন নিহত হয়েছেন। নিহতের নাম বদরুল। তিনি ছাত্রলীগের কর্মী ছিলেন। গোলাপগঞ্জ উপজেলার নগর গ্রামের বাসিন্দা নূর মিয়ার পুত্র তিনি। গতকাল সকাল ১১টার দিকে এ সংঘর্ষে আহত হয়েছেন আরো ১০ জন। এ ঘটনায় গতকাল রাতে নিহতের পিতা নূর মিয়া বাদী হয়ে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ১৫/২০ জনকে অভিযুক্ত করে গোলাপগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
গতকাল গোলাপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে বেশ কিছু ভোটকেন্দ্রে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী মঞ্জুর কাদির শাফি চৌধুরী এলিম ও বিদ্রোহী প্রার্থী সফিক উদ্দিনের সমর্থকদের মধ্যে সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে। তার মধ্যে ঢাকাদক্ষিণ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ ভোটকেন্দ্রে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। জানা যায়, সকাল ১১টার দিকে হঠাৎ করেই বিদ্রোহী গ্রুপের সমর্থকেরা মিছিল নিয়ে ঢাকাদক্ষিণ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ ভোটকেন্দ্র্রে প্রবেশ করতে চাইলে আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্রার্থীর সমর্থকদের বাধার মুখে পড়ে। তখন উভয় পক্ষে উত্তেজনা দেখা দেয়। এক পর্যায়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে উভয় পক্ষ। দেশীয় অস্ত্রের ঝনঝনানি, ককটেল বিস্ফোরন ও গুলির শব্দে ভোটকেন্দ্র রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এলাকাজুড়ে আতঙ্ক নেমে আসে। ভোটকেন্দ্রে ব্যাপক ভাংচুর করা হয়। শত শত ব্যালটপেপার আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ভোটগ্রহণ বন্ধ হয়ে যায়। হামলার শিকার হন সাধারণ ভোটারসহ নির্বাচন ডিউটিতে দায়িত্বরত অফিসার ও কর্মচারীরা। খবর পেয়ে বিপুল পরিমাণ পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে ৬ রাউন্ড টিয়ারশেল ও ১২ রাউন্ড ফাকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। ২ জনকে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। আহত ১০ জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। তার মধ্যে বদরুলের অবস্থা ছিল আশংকাজনক। হাসপাতাল যাওয়ার পথেই তিনি মারা যান।
উক্ত ঘটনায় গতকাল রাতেই নিহত বদরুলের পিতা নূর মিয়া বাদী হয়ে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ১৫/২০ জনকে অভিযুক্ত করে গোলাপগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেছেন। মামলার আসামীরা সবাই গোলাপগঞ্জ থানার বাসিন্দা। তারা হলেন- দত্তরাইল গ্রামের মাওলানা আকদ্দছ আলীর পুত্র মিজানুর রহমান, নগর দত্তরাইল গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের পুত্র মোহাম্মদ রুহেল আহমদ, রায়গড় গ্রামের আব্দুল হাফিজ খাঁনের পুত্র আবু সালমান খাঁন, দত্তরাইল গ্রামের মৃত সোনা উল্লাহর পুত্র কলিম উল্লাহ, রায়গড় গ্রামের আব্দুল হাফিজ খাঁনের পুত্র আবু ইকবাল খান, নগর গ্রামের আব্দুল কাদেরের পুত্র লোকমান আহমদ, রায়গড় গ্রামের আব্দুল জলিলের পুত্র আব্দুস সাদেক, বারকোট গ্রামের মামুনুর রহমানের পুত্র এহসানুর রশীদ সাজু, বারকোট গ্রামের আব্দুল জলিলের পুত্র আব্দুল আজিজ, কানিশাইল গ্রামের শফিক মিয়ার পুত্র নুরুল ইসলাম, মিশ্রপাড়া গ্রামের আছদ্দর চৌধুরীর পুত্র স্বপন চৌধুরী, দত্তরাইল গ্রামের ওয়ারিছ আলীর পুত্র সাজু আহমদ, বারকোট গ্রামের সেবুল মিয়ার পুত্র রেজা, দত্তরাইল গ্রামের ফারুক মিয়ার পুত্র রুমেল, রায়গড় গ্রামের রফিকের পুত্র সাকিব, দত্তরাইল গ্রামের জাহাঙ্গিরের পুত্র তারেক, নগর গ্রামের ছানওর আলীর পুত্র আখলু মিয়া।
এ ব্যাপারে গোলাপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মামলার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আটক আসামী লোকমান আহমদ ও আব্দুস সাদেককে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। বাকী আসামীদের ধরতে পুলিশের অভিযান চলছে।
উল্লেখ্য, গোলাপগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ইকবাল আহমদ চৌধুরী গত ২৯ জানুয়ারি মারা যাওয়ার পর এ পদটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। পরে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গতকাল ১৫ জুন এ আসনে উপনির্বচান অনুষ্ঠিত হয়।