• ৩রা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১লা জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

সৌদি আরবের জয়ের নেপথ্যের নায়ক হার্ভ রেনার্ড

Daily Jugabheri
প্রকাশিত নভেম্বর ২৩, ২০২২
সৌদি আরবের জয়ের নেপথ্যের নায়ক হার্ভ রেনার্ড

যুগভেরী ডেস্ক ::: প্রথমবারের মতো আর্জেন্টিনার বিপক্ষে জয় পেল সবুজ বাজপাখিদের দল সৌদি আরব। দুর্দান্ত খেলে ২-১ গোলে জিতেছে দলটি।

এর আগে দল দুটি মুখোমুখি হয়েছিল চার বার। আর্জেন্টিনার জয়ের সংখ্যা দুই, সৌদি জেতেনি এক ম্যাচেও। আর বাকি দুই ম্যাচ শেষ হয়েছে অমীমাংসিতভাবে। তবে বিশ্বকাপের মঞ্চে এবারই প্রথম মুখোমুখি হলো দল দুটি।

র‍্যাঙ্কিংয়ে আর্জেন্টিনার অবস্থান তৃতীয়। অন্যদিকে সৌদি আরব রয়েছে ৫০-এর বাইরে। কিন্তু তা সত্ত্বেও আজ চমক দেখাল সালেহ-দাওসারিরা। সৌদির প্রথমার্ধের খেলা আর দ্বিতীয়ার্ধের খেলার মাঝে ছিল বিস্তর ফারাক, যার কৃতিত্ব কোচ হার্ভ রেনার্ডের। টানা তিন বছর ধরে তিনি সামলাচ্ছেন সৌদির ডাগআউট। আজ তার আঁকা নকশাতেই বড়সড় হোঁচট খেতে হয়েছে মেসিদের। খবর মিরর-এর।

গত ১১ বছরে ১১ বার কোচ বদলেছে সৌদি আরব। সর্বশেষ ২০১৯ সালের জুলাইয়ে সাবেক ফরাসি ফুটবলার হার্ভ রেনার্ড কোচ হিসেবে দায়িত্ব নিলে আগের চেয়ে ভালো খেলার আশার আলো দেখতে থাকে দলটি।

ম্যাচের আগে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, ‘পিকনিক করতে আসিনি। নিজেদের সেরাটাই দিতে এসেছি।’ কথা যে মিথ্যে বলেননি, আজ বোঝা গেল!

আন্তর্জাতিক ম্যাচের দারুণ অভিজ্ঞতা আছে রেনার্ডের। দুই দেশকে দুই বার আফ্রিকা কাপ অব নেশনস (আফকন) শিরোপা জিতিয়ে দেওয়া প্রথম কোচ তিনি। জাম্বিয়া এবং আইভরি কোস্টকে যথাক্রমে ২০১২ এবং ২০১৫ সালে এ শিরোপা জিতিয়েছিলেন। আফ্রিকায় তার সফলতা দেখেই তাকে কোচ হিসেবে বাছাই করেছিল সৌদি।

তার পূর্ববর্তী সৌদি কোচ ছিলেন স্প্যানিশ নাগরিক হুয়ান আন্তোনিও পিজ্জি। ২০১৮ সালের রাশিয়া বিশ্বকাপে এবং পরের বছর এশিয়া কাপে ব্যর্থ হওয়ার পর সৌদ কোচ হিসেবে বাদ পড়ে যান পিজ্জি।

হার্ভ রেনার্ড আগে কেমব্রিজ ইউনাইটেডের এবং ২০১৮ সালের বিশ্বকাপে মরক্কোর কোচ ছিলেন। সৌদির দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে তার স্কোয়াডে অভিজ্ঞতা ও তরুণ খেলোয়াড়দের দারুণ সংমিশ্রণ ঘটিয়েছেন তিনি। অনূর্ধ্ব-২৩ দল থেকে বাছাই করা বেশ কয়েক জনকে স্থান দিয়েছেন জাতীয় দলে।

রেনার্ড তার কোচিং ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন নিজ দেশ ফ্রান্সে। এরপর কেমব্রিজ ইউনাইটেডের কোচ হিসেবে দায়িত্ব পেলে চলে যান ইংল্যান্ডে। সেখানে খুব একটা ভালো করতে পারেননি তিনি; হেরেছিলেন ১৪টি ম্যাচে, জিতিয়েছিলেন মাত্র পাঁচটি।

এমন বিপর্যস্ত রেকর্ড থাকা সত্ত্বেও ক্লাবটিতে খেলোয়াড় ব্যবস্থাপনার জন্য প্রশংসিত ছিলেন রেনার্ড। তার কোচ থাকাকালীন কেমব্রিজ স্কোয়াডের একজন খেলোয়াড় ছিলেন জন রুডি। তিনি বলেন, ‘কেবল ফার্স্ট-টিম লেভেলেই নয়, তখন আমি গোলরক্ষক হিসেবেও অনভিজ্ঞ ছিলাম। এতই নার্ভাস থাকতাম যে একটা গোল কিকও আটকাতে পারতাম না। কিন্তু নিজেকে বিশ্বাস করতে শেখাতে পারতেন রেনার্ড।’

কেমব্রিজ থেকে ছাঁটাইয়ের পর নাম ডিন ও এএস শেরবার্গের মতো ক্লাবগুলো থেকেও ছাঁটাই হন তিনি। বলা যায়, সেসময় খারাপ সময় যাচ্ছিল তার। এরপর এরপর জাম্বিয়ার কোচ হিসেবে দুই ধাপে নিযুক্ত হন। ২০১১ সালে দ্বিতীয় দফায় কোচ হয়ে দেখাতে শুরু করেন তার দক্ষতা।

২০১২ সালের আফকন ফাইনালে আইভরি কোস্টকে হারিয়ে দিয়ে পুরো মহাদেশটিকে চমকে দিয়েছিলেন তিনি। এরপর ২০১৪ সালে আইভরি কোস্টের কোচ হন তিনি। তার পরের বছর আফকন-এ ঘানাকে ৯-৮ গোলে (পেনাল্টি) হারিয়ে দিয়ে নতুন ইতিহাস গড়েন তিনি।

এরপর লিল-এ মাত্র ছয় মাসের মতো থেকে আবার আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফেরেন রেনার্ড। মরক্কোর কোচ হিসেবে আফ্রিকায় থেকে যান তিনি। এবং ২০ বছর পর তার প্রশিক্ষণে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে মরক্কো।

মরোক্কো ছাড়ার পর আরেক চাকরি পেতে বেগ পেতে হয়নি তার। ২০১৯ সালে নিয়োগ পান সৌদি আরবের কোচ হিসেবে।

আজকের খেলার আগে সৌদির জয় নিয়ে অনেকে সন্দিহান ছিলেন। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে দুর্দান্ত খেলা দেখে এখন আশায় বুক বাঁধছেন সৌদি সমর্থকরা।

আগামী ২৬ ও ৩০ নভেম্বর মরুর দেশটিকে লড়তে হবে যথাক্রমে পোল্যান্ড ও মেক্সিকোর সাথে। র‍্যাঙ্কিংয়ে মেক্সিকোর অবস্থান ১৩তম, অন্যদিকে পোল্যান্ড আছে ২৬তম অবস্থানে। কিন্তু মেসিদের বিপক্ষেই যখন তারা জিতেছে, রেনার্ড সবুজ বাজপাখিদের নকআউট পর্ব পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারবেন বলে আশা করাই যায়।

সংবাদটি শেয়ার করুন