যুগভেরী ডেস্ক ::: রাজধানীর নয়াপল্টনে পুলিশ ও বিএনপির সংঘর্ষের পর কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে যেখানে দেখা যায় সংঘর্ষে অংশ নেওয়া একাধিক ব্যক্তির পরনে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের জার্সি। এই ছবিগুলোর মধ্যে আর্জেন্টিনার জার্সি পরিহিত হেলমেট পরা এক অস্ত্রধারীকে অ্যাকশনে যেতেও দেখা যায়।
বিভিন্ন কর্মসূচিতে সাদা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদের সাদা পোশাকেও দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়। শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন নিয়ে বিভিন্ন সময় আলোচনা-সমালোচনা হলেও এটা থামেনি।
নয়াপল্টনের ওই অস্ত্রধারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য কিনা এনিয়ে তদন্ত চলছে বলে শুরুতেই জানিয়েছিল পুলিশ। বুধবারের সংঘর্ষের পর বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ওই ব্যক্তি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য কিনা তদন্ত চলছে।
এদিকে, বৃহস্পতিবার বিকালে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) প্রধান ও অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ নিশ্চিত করেছেন ছবির ব্যক্তিটি ছাত্রলীগের কেউ নন। তিনি বলেছেন, ‘নয়াপল্টনে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষে আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে অস্ত্রহাতে থাকা ব্যক্তি ছাত্রলীগের কেউ নন, তিনি একজন আনসার সদস্য।’
যারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যকে ছাত্রলীগের নেতা বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
আর্জেন্টিনার জার্সি পরিহিত অস্ত্রধারীর পরিচয় নিশ্চিতের আগেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছাত্রদল ও বিএনপির একাধিক পেজ ও ব্যক্তিগত আইডি থেকে ছবির ব্যক্তিটি ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সংসদের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়ক সম্পাদক আল-আমিন রহমানের ছবি বলে প্রচার চলছে।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক মো. ওমর সানী প্রচারিত ফেসবুকে এক কোলাজ ছবিতে অস্ত্রধারীকে ছাত্রলীগ নেতা আল-আমিন রহমান বলে প্রচার হচ্ছে। এই পোস্ট সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। দেশ-বিদেশে অনেকেই এটাকে আল-আমিন রহমান বলে বিভ্রান্ত হওয়ার প্রেক্ষাপটে ওই ছাত্রলীগ নেতা এর প্রতিবাদ করেছেন। প্রতিবাদ করেছে তার পরিবারও।
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের ভেরিফায়েড আইডিতে আল-আমিন রহমান বলেন, সাদা পোশাকে অস্ত্র হাতে এবং হেলমেট পরা একজনের ছবিকে দেশে-বিদেশে আমার ছবি বলে বিরোধী দলের গুজববাহিনীর লোকজন ফেসবুকে ভাইরাল করে প্রাণপ্রিয় সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ও আমার বিরুদ্ধে জঘন্য অপপ্রচার করছে। এ তালিকায় লন্ডনে পালিয়ে থাকা তারেক গংয়ের প্রোপাগান্ডা সেলের লোকজনেরও পরিচয় পাওয়া গেছে। আমি ছোটবেলা থেকে ফুটবল বিশ্বকাপে ব্রাজিলের সমর্থক। আমার শত্রুও তা জানে। কিন্তু ছবির ব্যক্তি পরে আছেন আর্জেন্টিনার জার্সি।
আল-আমিন জানান, আমার উচ্চতা ছয় ফুট। ছবিটা ভালো করে দেখলেই স্পষ্ট বুঝা যায়। পেছনে পুলিশের গাড়িও আছে। এ ছবি বিশ্লেষণ করে প্রকৃত ব্যক্তিকে আইডেন্টিফাই করতে বায়োলজি বা ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ হবার দরকার নেই। একটু পর্যবেক্ষণই যথেষ্ট। দুঃখজনক বিষয় হলো আমার উপজেলায় শ্রেষ্ঠ জননী পুরস্কার পাওয়া ফেসবুক প্রোফাইলে থাকা আমার রত্নগর্ভা মায়ের সঙ্গে ছবিটাও অপব্যবহার করছে গুজবসন্ত্রাসীরা।
তিনি আরও বলেন, বকশী বাজারে ছাত্রদলের নাশকতা, নানা সময় ক্যাম্পাসে সরকার বিরোধী অপতৎপরতা ও অস্থিতিশীলতা প্রতিরোধ, সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে অনড় অবস্থান, সর্বশেষ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে কটূক্তির সমুচিত জবাব দেওয়ার পর থেকে ছাত্রদল আমাকে আতংক ভাবে। এজন্যে তারা আমার বিরুদ্ধে এমন অপপ্রচারে নেমেছে।
শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের হাতে অস্ত্র নয়, কলম ও বই তুলে দিয়েছেন বলে মন্তব্য আল-আমিন রহমানের।
উল্লেখ্য, আল-আমিন রহমান ছাত্রলীগের ৩০তম জাতীয় সম্মেলনের পর নেতৃত্বের সংক্ষিপ্ত তালিকায় রয়েছেন বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। সিলেট সরকারি কলেজে ছাত্রলীগের কর্মী থেকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গড়ে ওঠা গণজাগরণ আন্দোলন, বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাস বিরোধী আন্দোলনে রাজপথে সক্রিয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকার বিরোধী আন্দোলন প্রতিরোধ এবং সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে কটূক্তির প্রতিবাদ করায় একজন ছাত্রদল নেত্রী কর্তৃক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের ৩২ জনের বিরুদ্ধে করা মামলার এক নম্বর আসামি হয়ে আলোচনায় রয়েছেন।
ছাত্রলীগের আসন্ন কমিটির জন্যে আল-আমিন রহমান সাধারণ সম্পাদক হিসেবে জীবন বৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন বলে জানা গেছে।