• ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২১শে মহর্‌রম, ১৪৪৬ হিজরি

অসচেতনতায় সুনামগঞ্জে গেল বছরে পানিতে ডুবে ২৬ শিশুর অকাল মৃত্যু

Daily Jugabheri
প্রকাশিত জানুয়ারি ৮, ২০২৩
অসচেতনতায় সুনামগঞ্জে গেল বছরে পানিতে ডুবে ২৬ শিশুর অকাল মৃত্যু

* ৫ বছরের নিচে শিশু মৃত্যুর ৬৭ ভাগ পানিতে ডুবে
* নয় বছরের কম শিশুদের মৃত্যুর হার বেড়েছে ৮ শতাংশ
* পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু প্রতিরোধে ১৬ জেলায়
হাজার শিশু দিবাযতœ কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ
বিন্দু তালুকদার, সুনামগঞ্জ
কালনী নদী সুনামগঞ্জের দিরাইয়ের উপজেলা সদরের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে। এই নদীর চান্দপুর গ্রামের কাছে নৌকায় বসবাস করছে শঙ্খ, চুড়িসহ কসমেটিকস বিক্রেতাদের গাইন সম্প্রদায়ের অন্তত ১৩ পরিবার। এই পরিবারগুলোর সাঁতার না জানা ছোট ৪ শিশুসহ অন্তত ১০/১২ শিশু রয়েছে। কিন্তু গত তিন যুগেও কোন শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়নি এই সম্প্রদায়ের।
গাইন সম্প্রদায়ের ব্যবসায়ী জাহের উদ্দিন বললেন,‘ আমরা নৌকা বসবাস করলেও চেষ্টা করছি চান্দপুরে বাড়ি তৈরির। আমরা যখন নৌকায় থাকি তখন সাঁতার না জানা শিশুদের চোখে চোখে দেখে রাখি। শিশুদের নজরদারী করতে পৃথক লোক থাকে, যাতে কোন শিশু নৌকা থেকে পানিতে না পরে। শিশুদের সুসরক্ষায় সবসময় সচতেন থাকার কোন বিকল্প নেই। যার কারণে আমার ৩৮ বছর বয়সে নৌকা থেকে কোন শিশুকে পানিতে পড়তে শুনিনি। ’
কিন্তু একই গ্রামের ডাঙ্গার চিত্র ভিন্ন। নদীর তীরে বসবাস করা পরিবারগুলো শিশুদের পানিতে ডুবে মৃত্যু রোধ পারেননি। গেল বছরের ১ এপ্রিল চাঁন্দপুর গ্রামে ডোবার পানিতে পড়ে এক সাথে প্রতিবেশী তিন শিশু রক্তিম দাস (১০), প্রমিত দাস (৮) ও বৃন্দা দাস (৮) মারা গিয়েছিল। তিন শিশু হারিয়ে শোকে স্তব্দ হয়ে গিয়েছিল চান্দপুর গ্রামবাসী।
যদিও প্রমিত দাসের মা মুক্তি রানী দাস বললেন,‘ আমাদের সচেতনতার অভাব ছিল না। আমরা সবসময় ছেলে-মেয়েকে চোখে চোখে রাখি। কিন্তু ওই দিন প্রমিত একটু সময় খেলেই চলে আসবে বলে ঘর থেকে বের হয়েছিল। মাত্র ১৫-২০ মিনিট পরেই আমরা তাকে খোঁজতে গিয়ে পানিতে পাই।’ যাদের বাড়ির আশপাশে পানি আছে তাদের শিশুদের সাঁতার শেখানো ও শিশুদের সব সময় নজরে রাখার পরামর্শ দেন তিনি।
জানা যায়, গেল বছর সারা দেশে পানিতে ডুবে নয় বছরের কম বয়সী শিশুদের মৃত্যুর হার বেড়েছে ৮ শতাংশ। এ সময় পানিতে ডুবে মৃতদের মধ্যে ৮১ শতাংশের বয়স ছিল নয় বছরের কম। গেল বছরে সিলেট বিভাগে পানিতে ডুবে ৯১ জন মারা যায়। সুনামগঞ্জে পানিতে ডুবে ২৬ শিশুসহ ৪৭ জন মারা গেছেন। এরমধ্যে নৌ দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৯ জন। জেলার ৫ উপজেলায় জোড়ায় জোড়ায় পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল অন্তত ৫টি।
শুধু হাওর,নদী,খাল-বিলের সুনামগঞ্জ নয়। পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর হারে বাংলাদেশ সারা বিশ্বে অন্যতম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব অনুযায়ী প্রতিবছর বাংলাদেশে প্রায় ১২ হাজার শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। প্রতিদিন ১৮ বছরের নিচে অন্তত ৪০ শিশুর মৃত্যু হয়। দেশে ৫ বছরের নিচে শিশু মৃত্যুর ৬৭ ভাগ হয় পানিতে ডুবে।
গণমাধ্যম ও উন্নয়ন যোগাযোগ সংগঠন ‘সমষ্টি’র তথ্য অনুযায়ী, গত ৩ বছরে পানিতে ডুবে সুনামগঞ্জ জেলায় মারা গেছে গেছে ৮৯ জন। এরমধ্যে ৪ বছরের নিচে ২৭ জন, ৫-৯ বছরের শিশু ৪৭ জন, ১০ থেকে ১৪ বছরের মধ্যে ৫ জন এবং ১৮ বছরে উর্ধ্বে ১০ জন। ২০২০ সালে ২১ জন, ২০২১ সালে ৩৪ জন এবং ২০২২ সালে ৩৪ জন পানিতে ডুবে মারা গেছে।
সমষ্টির গবেষণা ও যোগাযোগ বিভাগের পরিচালক রেজাউল হক বলেন,‘ পানিতে ডুবে মৃত্যুর সব ঘটনার তথ্য গণমাধ্যম পায় না। এ নিয়ে জাতীয় ও স্থানীয়ভাবে কোনো কার্যকর তথ্য ব্যবস্থা এখনো গড়ে উঠেনি। গণমাধ্যম প্রতিবেদনগুলো শুধুমাত্র ঘটনা কেন্দ্রীক। পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু প্রতিরোধে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ২৭১ কোটি টাকা ব্যায়ে দেশের ১৬টি জেলায় ৮ হাজার গ্রামভিত্তিক শিশু দিবাযতœ কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ, তাহিরপুর ও দোয়ারাবাজার উপজেলায় দিবাযতœ কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। বাংলাদেশ শিশু একাডেমি আগামী দুই বছরে এই কাজ বাস্তবায়ন করবে। এতে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যুর হার ৭০ শতাংশ রোধ করা সম্ভব হবে।’
স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গেল বছরের ৯ জানুয়ারি জগন্নাথপুর পৌরসভার পশ্চিম ভবানীপুরে পুকুরের পানিতে ডুবে জাকারিয়া হোসেন (৬), ১ এপ্রিল দিরাই উপজেলার চান্দপুর গ্রামের ডোবা পড়ে এক সাথে প্রতিবেশী তিন শিশু রক্তিম দাস (৭), প্রমিত দাস (৬) ও বৃন্দা দাস (৬), ৭ মার্চ ছাতক উপজেলার কৃষ্ণনগর গ্রামে পানিতে ডুবে দুই বোন সুমাইয়া বেগম (৯) ও নাহিদা বেগম (৫), ৬ জুন মধ্যনগর উপজেলার বলরামপুর গ্রামে ডোবার পানিতে ডুবে মাহাদী (৫), ১৯ জুন ছাতক উপজেলার কালিপুর গ্রামের হানিফা বেগম (৯), ২৭ জুন বন্যার পানিতে ডুবে জগন্নাথপুর উপজেলার হরিহরপুরের আরিয়ান (৭), ১২ জুলাই জামালগঞ্জ উপজেলার খুজারগাঁও গ্রামে পানিতে ডুবে পার্থিক তালুকদার (৩), ২৩ জুলাই জগন্নাথপুর উপজেলার সাদিপুর পূর্বপাড়া গ্রামে পুকুরে ডুবে ২২ মাস বয়সী সিয়াম আহমেদ, ২৫ জুলাই ছাতক শহরের সওজ’র প্রকৌশলীর কার্যালয়ের পাশের ডোবার পানিতে ডুবে রহিম মিয়া (৪), ২৯ জুলাই দোয়ারাবাজার উপজেলার বাজিতপুর গ্রামের মরা সুরমা নদীতে ডুবে রিহান (৪), ১ আগস্ট বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ধনপুর ইউনিয়নের তরঙ্গিয়া গ্রামে দুই মামাতো ফুফাতো বোন মারিয়া বেগম (৫) ও ঝুমা আক্তার (৮), ৭ আগস্ট ধর্মপাশা উপজেলার চাকিয়ারচাপুর গ্রামে হাওরে গোসল করতে নেমে পানিতে ডুবে সোহাগ মনি (৯), ১৩ আগস্ট তাহিরপুর উপজেলার চতুর্ভূজ গ্রামে হাওরের পানিতে ডুবে মোবারক হোসেন (২) ও তোফাজ্জল হোসেন (৩), ২৮ আগস্ট মধ্যনগরের বুড়িপত্তন গ্রামে নদীর পানিতে ডুবে মেহেদী হাসান (৭), ৩০ আগস্ট দিরাই উপজেলার আলীনগর গ্রামের দিলার হোসেন (৫), ৭ অক্টোবর হাওরে খেলাধুলা করতে গিয়ে গর্ত পড়ে মারা যায় শান্তিগঞ্জ উপজেলার হাসারচর গ্রামের ফাহিমা বেগম (১১) ও ফাইজা বেগম (৯), ১৯ সেপ্টেম্বর ধর্মপাশার কান্দাপাড়া গ্রামে শাম্মী আক্তার (৫), ২ অক্টোবর একই উপজেলার দাসপাড়া গ্রামে ডোবার পানিতে ডুবে বায়োজিদ (৭), ৩ নভেম্বর শাল্লার সরমা গ্রামে নদীর পানিতে ডুবে খালাতো ভাই দিয়ামিন মিয়া (৭) ও ইউসুফ আলীর (৫) মৃত্যু হয়। এছাড়া নৌকা ডুবি ও নৌদুর্ঘটনায় জেলার বিভিন্ন উপজেলায় আরও ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এছাড়াও গত বছরের ১৯ মে ঝড়ের কবলে দিরাই উপজেলার জগদল ইউনিয়নের রাজনাও গ্রামের কৃষক কার্তিক রঞ্জন তালুকদার (৩৫), ২৯ মে জগন্নাথপুর উপজেলার জামালপুর রৌডর গ্রামের প্রতিবন্ধী ছাবিনা বেগম (২১), ১৮ জুন থেকে ২২ জুনের মধ্যে ছাতক উপজেলায় পানিতে ডুবে মুক্তিরগাঁও গ্রামের প্রতিবন্ধী তমাল (১৮), পৌর শহরের বাগবাড়ী এলাকার ব্যবসায়ী পীযুষ দে (৪৮), রাধানগর গ্রামের বাসিন্দা খালেদ মিয়া (২৭), চৌকা গ্রামের বাসিন্দা অশোক দাস (১৮), নাদামপুর গ্রামের বাসিন্দা মখলিছুর রহমান (৪৫), দিঘলী গ্রামের বাসিন্দা অজিত রায় (২২),বিশ্বম্ভরপুরের বাসিন্দা হাফিজ আলী (৩২), ধর্মপাশার লংকা পাথারিয়া গ্রামে মানসিক প্রতিবন্ধী ফসর বানু (৪০), ১৩ জুন শান্তিগঞ্জ উপজেলার সালদিঘা হাওরে ইট বোঝাই নৌকা ডুবে শ্রমিক ঝন্টু দাস (৫০), ২৯ জুন জামালগঞ্জের পাগনার হাওরে ঝড়ে নৌকা ডুবে কামারগাঁও গ্রামের বিপ্টু মজুমদার (২২), ১৪ জুলাই দিরাইয়ে চাপতির হাওরে ঝড়ে নৌকাডুবিতে চন্ডিপুর গ্রামের মুজিবুর রহমান (৫০) ও আনহার মিয়া (২০), একই দিনে জগন্নাথপুরে ঝড়ের কবলে পড়ে নৌকাডুবে চানপুর চকবিল গ্রামের শিক্ষক মুফতি মাওলানা বদরুল ইসলাম (৪৪), ২৩ জুলাই দোয়ারাবাজার উপজেলার পলিরচর গ্রামে পুকুরের পানিতে ডুবে মাকসুদুর রহমান জিমাম (২০),৬ আগস্ট ধর্মপাশা উপজেলার চাকিয়ারচাপুর গ্রামে পুকুরের পানিতে ডুবে সাব্বির মিয়া (২৪), ৮ আগস্ট জামালগঞ্জে ঝড়ের কবলে পড়ে নৌকাডুবিতে মাহমুদপুর গ্রামের জেলে শরিফ উদ্দিন (৪০), ২২ সেপ্টেম্বর সেপ্টেম্বর জামালগঞ্জে দু’টি নৌযানের মধ্যে সংঘর্ষে বালুভর্তি ট্রলার ডুবে শান্তিগঞ্জ উপজেলার মুরাদপুর গ্রামের হেলাল মিয়া (৩২) ও জামালগঞ্জের সাচনাবাজার ইউনিয়নের নাজাতপুর গ্রামের তুলা মিয়া (৫০) ও ৫ ডিসেম্বর জগন্নাথপুর উপজেলার মক্রমপুর গ্রামে পানিতে ডুবে মারা যায় সুজন মিয়া (১৯)।
গেল বছরের ৭ অক্টোবর শান্তিগঞ্জ উপজেলার সাংহাই হাওরের পানিতে ডুবে মারা গিয়েছিল হাসারচর গ্রামের ফাহিমা বেগম ও ফাইজা বেগম। সম্প্রতি সরেজমিনে হাসারচর গ্রামে গেলে গ্রামের খায়রুন বেগম ও জোৎ¯œা বেগম বললেন,‘ অনেক পরিবারই দিন আনে দিন খায়। তাই কাজের সন্ধানে বড়দের বাইরে যেতে হয়। সকালে হাওরে গোবর সংগ্রহ করতে গিয়ে দুই শিশু খাড়ায় (গর্ত) পড়ে গিয়েছিল। ফাইজা লাফ দিয়ে খাড়া (গর্ত) পার হতে পারবে মনে করেছিলো। তাকে বাঁচাতে গিয়ে ফাহিমাও গর্তে পড়ে কাদায় আটকে মারা যায়। গরু চরাতে গিয়ে অন্যরা লাশ ভাসতে দেখে খবর জানায়।’
হাসারচর গ্রামের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত মাদ্রাসা শিক্ষক মাও. নুর উদ্দিন বললেন,‘ গ্রামের বেশিরভাগ পরিবার কৃষি ও শ্রমজীবী। আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। সাত সকালে অনেক বাবা-মা বাড়ির বাইরে চলে যান। সেই সময়ে ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের দেখাশোনার কেউ থাকে না। অনেক মা-বাবা সচেতনও নয়, ছেলে বা মেয়ে কোথায় যাচ্ছে কি করছে তারা সেই খবর রাখে না। শুকনো মৌমুমে প্রতি বছরই বসতভিটা ও রাস্তা সংস্কারের জন্য লোকজন নদী ও হাওর থেকে গর্ত করে মাটি তোলে। এসব গর্তে পড়েও সাঁতার জানা শিশুরা মারা যায়।’
হাসারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা স্বপ্না রানী দাশ বলেন,‘ সুনামগঞ্জের অধিকাংশ গ্রামের আশপাশে সারা বছর পানি থাকে। হাসারচর গ্রামের সামনে নদী এবং পেছনে হাওর রয়েছে। এছাড়াও বাড়ির পাশে পুকুর ও খাল রয়েছে। যার কারণে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে। ’
তিনি বলেন,‘ আমাদের জানা মতে গত ১৬ বছরে এই গ্রামের ৬ জন শিশু পানিতে ডুবে মারা গেছে। বেশিরভাগ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে বিদ্যালয় বন্ধের দিনগুলোতে। আমরা বছরে তিন বার মা সমাবেশ ও চার বার উঠান বৈঠকে বিভিন্ন বিষয়ে অভিভাবকদের সচেতন করার চেষ্টা করছি।’
হাওর এরিয়া আপলিফটমেন্ট সোসাইটি (হাউস’র) নির্বাহী পরিচালক সালেহীন চৌধুরী শুভ বলেন,‘ পানিতে ডুবে মৃত্যুর মত মর্মান্তিক ও অনাকাঙ্খিত মৃত্যু পরিবার ও সমাজের জন্য খুবই কষ্টকর। পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু রোধ করতে পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি, শিশুদের সাঁতার শেখানো ও মা-বাবার কাজের সময় শিশুদের নজরদারীতে রাখতে হবে। রাষ্ট্রিয়ভাবে সমন্বিত উদ্যোগ নিলে শিশু মৃত্যু কিছুটা হলেও রোধ করা সম্ভব হবে।’
সুনামগঞ্জ জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা বাদল চন্দ্র বর্মণ বলেন,‘ পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যু প্রতিরোধে সুনামগঞ্জ জেলার শান্তিগঞ্জ, তাহিরপুর ও দোয়ারাবাজার উপজেলায় শিশুদের সাঁতার শেখানোর একটি প্রকল্প শুরু হবে। বিষয়টি প্রক্রিয়াধিন রয়েছে। এই প্রকল্পটি গত বছরের জুলাই মাসে অনুমোদন হয়েছে। করোনার জন্য প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু করতে বিলম্ব হয়েছে। শিশু একাডেমির মাধ্যমে এটি বাস্তবায়িত হবে।’
সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) আবু সাঈদ বলেন,‘পরিবেশ-পরিস্থিতি, মা-বাবাও অভিভাবকদের অসচেতনতার কারণেই পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু হয়। কারণ শহরে যেভাবে শিশুদের বাসার বাহিরে গেলে দুর্ঘটনা বা ছিনতাইয়ের বিষয়ে সর্তক করা হয় সেভাবে গ্রামের শিশুদের সতর্ক ও তাদের প্রতি খেয়াল রাখা হয় না।’
পারিবারিক সচেনতাই পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যু রোধ করতে পারে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন,‘ পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু হলে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেই। সন্দেহ বা অভিযোগ না থাকলে স্বজন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অনুরোধে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের সুপারিশে লাশ দাফনের অনুমতি দেওয়া হয়। অনেক সময় দুর্গম এলাকায় ঘটনা জানাও সম্ভব হয় না। ’
সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. আহম্মদ হোসেন বলেন,‘ পানিতে পড়ে নাক-মুখ ডুবে গেলে অক্সিজেন সরবরাহ কমে শরীর দ্রুত শীথিল হয়ে শিশুর মৃত্যু হয়। পানিতে ডুবে বেশিরভাগ শিশুর মৃত্যু হয় অসচেতনার কারণে। পানিতে ডুবে মুত্যু প্রতিরোধে সামাজিক ও পারিবারিক সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজন। সারা দেশের তুলনায় ভৌগলিক কারণে সুনামগঞ্জে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর হার বেশি।’
তিনি আরও বলেন,‘ দেশে ৫ বছরের নিচে ৬৭% শিশুর মারা যায় পানিতে ডুবে। সকাল ৯টা থেকে দুপুরের ১টার মধ্যে বাড়ির ২০-২৫ গজের মধ্যে বেশি মৃত্যু ঘটে। সতর্কতার জন্য শিশুদের চলাফেরার সময় শব্দের সৃষ্টি করতে ঝুনঝুনি কিছু বেধে দেওয়া যেতে পারে। এতে শিশুদের চলাফেরার সময় আওয়াজ পাওয়া যাবে, এতে বোঝা যাবে সে কোথায় আছে।’
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী বলেন,‘ সুনামগঞ্জ জেলা হাওর, নদী,খাল-বিলে ভরপুর। এই অঞ্চলের গ্রামগুলোর চারপাশে বছরের অধিকাংশ সময় পানি থাকে। তাই অন্য জেলার চেয়ে এখানে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর হার একটু বেশি। পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু প্রতিরোধে গ্রাম পর্যায়ে অভিভাবকদের সচেতনতা বৃদ্ধির কোন বিকল্প নেই। তাই সবাইকে বেশি করে সচেতন হতে হবে। পানিতে ডুবে বা কোন দুর্ঘটনায় কারো মৃত্যু হলে দরিদ্র পরিবার ও স্বজনদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়ে থাকে। ’

সংবাদটি শেয়ার করুন