• ২২শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৬ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৯শে রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

সিলেটে বন্যায় সড়কেই ক্ষতি পাঁচশ’ কোটি টাকা

Daily Jugabheri
প্রকাশিত জুন ২৭, ২০২৪

সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির ক্রমে উন্নতি হচ্ছে। জেলার বেশিরভাগ এলাকার রাস্তাঘাট থেকে নামতে শুরু করেছে পানি। নদীর পানিও কমছে।

এদিকে, পানি কমার সাথেসাথে ভেসে উঠছে ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন। এবারের বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে সড়কের। ঢল ও পানিতে ভেঙে গেছে সড়ক। অনেক স্থানে সেতুও ভেঙে গেছে ঢলের তোড়ে। এছাড়া কৃষি ও মৎস্যখাতেও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

সিলেট নগর, এলজিইডি এবং সড়ক ও সেতু বিভাগের আওতাধীন সড়কগুলোতে পানি উঠে প্রায় ৫শ’ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া মৎস্য ও কৃষি খাতে ক্ষতি তিনশ’ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। তবে পানি এখনো পুরো না নামায় ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ চিত্র এখনই পাওয়া যাবে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিস্টরা। এক্ষেত্রে ক্ষতির পরিমান আরও বাড়তে পারে।

সিলেট জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, বুধবার পর্যন্ত সিলেট জেলায় পানিবন্দি অবস্থায় আছেন ৭ লাখ ৮৪ হাজার ২৫০ জন। এরমধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রে আছেন ১২ হাজার ৪২৩ জন।

সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল শাখা সূত্রে জানা গেছে, এবারের বন্যায় নগরের ২৫০ কিলোমিটার সড়ক পানিতে তলিয়ে যায়। এতে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, এখনও কিছু সড়কে পানি রয়ে গেছে। পানি পুরো নামলে ক্ষতির পরিমান আরও বাড়তে পারে। বৃষ্টি মৌসুম শেষ হলেই জরুরী ভিত্তিতে এসব সড়ক সংস্কার করা হবে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সিলেট জেলার তথ্যানুযায়ী, বন্যায় সিলেটের ১৩টি উপজেলার ১৬০ কিলোমিটার সড়কের ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। টাকার অংকে ক্ষতির পরিমান প্রায় ১১৯ কোটি টাকা।

আর সড়ক ও সেতু বিভাগের তথ্য মতে, বন্যায় সিলেট জেলার ৪০ কিলোমিটার সড়কে পানি উঠে প্রায় ৮৫ কোটি টাকার ক্ষতি।

সড়ক ও সেতু বিভাগের সিলেট জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী আমির হোসেন বলেন, বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতি হয়েছে গোয়াইনঘাট ও কানাইঘাট উপজেলার সড়কের। এ উপজেলার দুটি সড়ক যান চলাচলের অনুপযোগী হলে দ্রুত সংস্কার কাজ করে যান চলাচলের উপযোগী করা হয়েছে। বাকীগুলোও দ্রুততম সময়ের মধ্যে সংস্কার করা হবে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সিলেট জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী কে এম ফারুক হোসেন বলেন, বন্যায় গ্রামীণ সড়কগুলোর মধ্যে বচেয়ে ক্ষতি হয়েছে গোয়াইনঘাট, সিলেট সদর, কোম্পানীগঞ্জ ও বালাগঞ্জ উপজেলায়। যেসব সড়ক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তা সংস্কারের জন্য ডিপিপি চূড়ান্ত করে পাঠানো হবে।

এদিকে, চলতি বন্যায় সিলেটের ১৩ উপজেলার ১৫ হাজার ৫০৬ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন জেলার ৯৮ হাজার ৬৫৩ কৃষক। জেলায় এবার আউশ বীজতলা, সবজি ও বোনা আমন ধানের ২০ হাজার ৪৪০ হেক্টর জমি আবাদ করা হয়েছিলো।

সিলেট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ খয়ের উদ্দিন মোল্লা বলেন, বন্যায় মোট ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ ২৭৫ কোটি ২১ লাখ টাকা। এর মধ্যে আমন ধান চাষিদের আর্থিক প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। অন্যদেরও প্রণোদনা দেয়া হবে।

সিলেট জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, বন্যায় সিলেট জেলায় ৪৪ কোটি ৮৫ লাখ ৬৬ হাজার টাকার মৎস্য সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। ২১ হাজার ১১১টি পুকুর-দিঘী-খামারের মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) সীমা রাণী বিশ্বাস বলেন, সিলেটের ১৩টি উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে জকিগঞ্জে। এ উপজেলার ছয় হাজার ৭৫৫টি পুকুর-দিঘি-খামারের মাছ ভেসে গিয়ে ১৮ কোটি ৩৯ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

এদিকে, বুধবার সিলেটে নদনদীর পানি আরও কমেছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। বুধবার সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে কুশিয়ারা নদীর অমলসিদ পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার ও ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। মঙ্গলবারের তুলনায় প্রত্যকটি পয়েন্টে পানি ৩ থেকে ১২ সেন্টিমিটার পর্যন্ত পানি কমেছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন