• ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২২শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

সিলেটে আবারও বাড়ছে পানি, বন্যার শঙ্কা

Daily Jugabheri
প্রকাশিত জুলাই ১, ২০২৪
সিলেটে আবারও বাড়ছে পানি, বন্যার শঙ্কা

সিলেটে গত ২৪ ঘণ্টায় কুশিয়ারা নদীর পানি সামান্য কমলেও অন্য নদ-নদীর পানি বেড়েছে। তবে অন্য নদ-নদীর পানি রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত বিপৎসীমা অতিক্রম করেনি। এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে ভারী বর্ষণের সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে।

সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, রোববার বিকেল চারটা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা সিলেট বিভাগের ভারী (২৪ ঘণ্টায় ৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার বৃষ্টি) থেকে অতি ভারী (২৪ ঘণ্টায় ৮৯ মিলিমিটারের ওপরে) বৃষ্টি হতে পারে।

সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, ২ জুন থেকে কুশিয়ারা নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে। রোববার সন্ধ্যা ছয়টায় নদীর ওই পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার ৮২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় নদীর পানি কমেছে মাত্র ১ সেন্টিমিটার। নদীর ওই পয়েন্টে বিপৎসীমা ৯ দশমিক ৪৫ সেন্টিমিটার।

পাউবো সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, দুটি নদীর পানি এসে কুশিয়ারা নদীতে গিয়ে মেলে। এতে অন্য নদ-নদীর পানি কমলেও কুশিয়ারার পানি বাড়ে। একই কারণে পানি ধীরগতিতে নামে। এ ছাড়া নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় পানি ধীরগতিতে নামছে। তবে বৃষ্টি হলে ও পাহাড়ি ঢল নামলে পানির পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও জানা গেছে, রোববার সন্ধ্যা ছয়টায় সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে পানি ১২ দশমিক ৫৬ সেন্টিমিটার দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এর আগে শনিবার সন্ধ্যা ছয়টায় নদীর ওই পয়েন্টে পানি ১২ দশমিক ৩৩ সেন্টিমিটার দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। নদীর ওই পয়েন্টে বিপৎসীমা ১২ দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটার। নদীর সিলেট পয়েন্টে পানি সন্ধ্যায় ৯ দশমিক ৯৪ সেন্টিমিটার দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। নদীর ওই পয়েন্টে পানির বিপৎসীমা ১০ দশমিক ৮০ সেন্টিমিটার।

এদিকে সিলেটের সুরমা নদীর পানি কমলেও সিলেটের সীমান্তবর্তী এলাকা গোয়াইনঘাটের জাফলং, কোম্পানীগঞ্জ ও জৈন্তাপুর এলাকা দিয়ে প্রবাহিত নদ-নদীগুলোর পানি গত ২৪ ঘণ্টায় বেড়েছে। জৈন্তাপুরের সারি নদীর সারিঘাট পয়েন্টে পানি শনিবার সন্ধ্যায় ১০ দশমিক ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও রোববার সেটি বৃদ্ধি পেয়ে ১০ দশমিক ৫২ সেন্টিমিটারে দাঁড়ায়। এই পয়েন্টে বিপৎসীমা ১২ দশমিক ৩৫ সেন্টিমিটার। সারি নদীর গোয়াইনঘাট পয়েন্টে পানি শনিবার ৯ দশমিক ৩৬ সেন্টিমিটার দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। আর রোববার এই পয়েন্টে পানির উচ্চতা বেড়ে দাঁড়ায় ৯ দশমিক ৫৯ সেন্টিমিটার। এই পয়েন্টে বিপৎসীমা ১০ দশমিক ৮২ সেন্টিমিটার।

পাউবো সিলেটের কর্মকর্তারা বলছেন, সিলেটের সীমান্ত এলাকায় প্রবাহিত নদ-নদীগুলোর পানির বাড়া-কমার বিষয়টি ভারতে বৃষ্টির ওপর নির্ভর করে। সিলেটে কম বৃষ্টি হলেও ভারতের বৃষ্টির ফলে পাহাড়ি ঢল নিম্নাঞ্চলে প্রবাহিত হয়।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ১৩টি উপজেলার মধ্যে ১০টি উপজেলার আশ্রয়কেন্দ্রে রোববার পর্যন্ত ১০ হাজার ৯০৩ জন আশ্রয় নিয়েছেন। জেলায় ৬৫৩টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। এর মধ্যে ২১৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে লোক উঠেছেন। তবে সিলেট সিটি করপোরেশন ও সদর উপজেলায় আশ্রয়কেন্দ্রে লোকজন নেই।
কুশিয়ারার পানি টানা ২৮ দিন ধরে বিপৎসীমার ওপরে: সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে কুশিয়ারা নদীর পানি টানা ২৮ দিন ধরে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ১ জুন সন্ধ্যা ছয়টা থেকে ওই পয়েন্টে পানি বিপৎসীমায় অবস্থান করে। পরে ২ জুন থেকে শনিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত কুশিয়ারা নদীর পানি ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

সিলেটের পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে কুশিয়ারা নদীর পানির বিপৎসীমার ৯ দশমিক ৪৫ সেন্টিমিটার। রোববার দুপুর ১২টায় এই পয়েন্টে বিপৎসীমার ৮৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে কুশিয়ারা নদীর পানি প্রবাহিত হয়। এ নিয়ে টানা ২৮ দিন ধরে ওই পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া আজ দুপুর ১২টায় সিলেটের কানাইঘাট পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি ১২ দশমিক ৩৩ সেন্টিমিটারে অবস্থান করছিল। এই পয়েন্টে বিপৎসীমা ১২ দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটার। সিলেট পয়েন্টে বিপৎসীমা ১০ দশমিক ৮০ সেন্টিমিটার। সেখানে আজ দুপুরে সুরমার পানি ৯ দশমিক ৮৬ সেন্টিমিটার দিয়ে প্রবাহিত হয়।

সিলেটের পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, কুশিয়ারা নদীতে জুড়ী নদী ও শেরপুরের মনু নদের পানি এসে মিলিত হয়। একই নদীতে আরও দুটি নদীর পানি মিলিত হওয়ায় পানি বেড়ে যায়। ফলে কুশিয়ারার পানি বিপৎসীমার নিচে নামতে সময় লাগে। এ ছাড়া নিম্নাঞ্চল প্লাবিত থাকায় এবার পানি ধীরগতিতে নামছে। তবে নতুন করে ভারী বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢল না হলে পরিস্থিতি দ্রুতই উন্নতি হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন