* জীবন বাঁচাতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন
* পুলিশ নীরব
স্টাফ রিপোর্টার :::
সিলেটে আওয়ামী লীগে যোগ না দেওয়া, শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবীতে রাজপথে মিছিল সমাবেশে অংশ নেওয়া, শেখ হাসিনার প্রহশনের নির্বাচনের বিরুদ্বে ব্যানার পোস্টার সহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার প্রচারণা চালানো ও সর্বশেষ সন্ত্রাসীদের দাবী অনুযায়ী চাঁদা না দেওয়ায় এক তরুণ রাজনৈতিক নেতার উপর দু’দফা হামলা চালিয়ে তাকে হত্যার চেষ্টা করেছে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা। শুধু তাই নয় গত ৫ আগষ্ট ২০২৪ইং তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাসায় হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ চালিয়ে ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতি সাধন করেছে সন্ত্রাসীরা। এখন সন্ত্রাসীদের অব্যাহত হুমকী ও জীবন নাশের শঙ্কায় তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। সিলেটের ঐ তরুণ রাজনিতীবিদের নাম সাদিকুর রহমান রুবেল। তিনি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ প্রতিষ্ঠিত লিবারেল ডেমেক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)’র সিলেট নগরীর ২২নং ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক ও সিলেট মহানগর শাখার প্রচার সম্পাদক।। তার বাড়ি গোলাপগঞ্জের গোলাপ নগর গ্রামে। তিনি ঐ গ্রামের আব্দুল মান্নানের পুত্র। বর্তমানে তিনি সিলেট নগরীর শাহজালাল উপশহরস্থ ব্লক এইচ রোড নং ৫ এর ৪৩ নং বাসায় পরিবার নিয়ে বসবাস করেন।
বিভিন্ন সুত্রে জানা যায়, সাদিকুর রহমান সিলেট নগরীর একজন স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী ও তরুণ রাজনীতিবিদ। তিনি সিলেটের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন সিলেট চেম্বার অব কমার্সের একজন সদস্য। সিলেট নগরীর ঐতিহ্যবাহী কালিঘাট চাউল বাজার এলকায় তাদের নিজস্ব পারিবারিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান “মেসার্স বাছন মিয়া এন্ড সন্স” নামে একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন থেকে ঐ প্রতিষ্ঠান সুনামের সাথে পরিচালনা করে আসছেন। পাশাপাশি তিনি ২০১৯ সালের ৫ সেপ্টেম্বর কর্নেল (অব.) ওলি আহমদ প্রতিষ্ঠিত লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)-তে যোগদান করেন। এর পর থেকে সক্রিয়ভাবে রাজনীতি করে আসছেন। তিনি সিলেট নগরীর ২২ নং ওয়ার্ড এলডিপির সাধারণ সম্পাদক ও দলের সিলেট মহানগর শাখার প্রচার সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এলডিপির রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার পর থেকেই তৎকালীন ক্ষমতাশীল আওয়ামী লীগের একটি পক্ষ তার বিরুদ্বে অবস্থান নিতে থাকে। তারা বার বার আওয়ামীলীগে যোগদানের জন্য চাপ দিতে থাকে। অন্যথায় হত্যার হুমকী দেয় সাদিকুর রহমান রুবেলকে।
২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি দেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ না করায় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ তাকে নানাভাবে হুমকী-ধামকী দিতে থাকে। এক পর্যায়ে তিনি জীবন নাশের শঙ্কায় বাধ্য হয়ে ২০২৪ সালের ১০ জানুয়ারি দেশ ছেড়ে কানাডায় পালিয়ে যান। মাঝে প্রায় পাঁচ মাস তরুণ রাজনীতিবিদ সাদিকুর রহমান রুবেল দেশে আসলেও সন্ত্রাসীদের হুমকী-ধামকীতে বেশিদিন থাকতে পারেননি। যার কারণে ২০২৪ সালের ২৩ জুন তিনি আবারও কানাডায় পালিয়ে যান। তবে ভিকটিম রুবেল জানিয়েছেন কানাডায় অবস্থানকালে তিনি একদিন হোটেল থেকে বাইরে খাবার আনতে যাওয়ার পথে লক্ষ্য করেন কিছু লোক তাকে অনুস্মরণ করছে। এসময় মোঃ আলী নামে এক ব্যক্তি নিজেকে প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা পরিচয় দিয়ে বলে ‘আমরা দেশে তোকে মারার জন্য খুঁজতেছি আর তুই এখানে পালিয়ে এসেছিস?’- তার কথা শুনে তিনি আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে যান এবং কোনো রকম পরিস্থিতি সামাল দিয়ে নিজেকে রক্ষা করে হোটেলে চলে যান এবং ঘটনাটি আমেরিকা প্রবাসী তার ফুফুকে জানান। পরে ফুফু তাকে কানাডা-আমেরিকা বর্ডার অতিক্রম করে আমেরিকায় চলে আসতে বলেন। ফুফুর এ পরামর্শে ১ জুলাই ২০২৪ সালে রুবেল আমারিকায় চলে যান।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছে ভিকটিম তরুণ রাজনীতিবিদ সাদিকুর রহমান রুবেল দেশে থাকা অবস্থায় ২০২২ সালের ১৫ নভেম্বর তার উপর প্রথম দফায় হামলার ঘটনা ঘটে। সিলেট নগরীর কালিঘাটস্থ তার নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে রাত ৯ টার দিকে বাসায় যাওয়ার পথে নগরীর উপশহর এলাকার মাসালা বাজারের সামনে আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক আহমদের নেতৃত্বে নগরীর শীর্ষ সন্ত্রাসী মাছুম, সাহান, জনি, সালাম ও আমিনের নেতৃত্বে ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ সাদিকুর রহমান রুবেলের মোটর সাইকেলের গতিরোধ করা হয়।। এক পর্যায়ে তারা তাকে মোটর সাইকেল থেকে নামিয়ে সন্ত্রাসী মাছুম তার হাতে থাকা চায়নিজ কুড়াল দিয়ে মাথায় কুপ দেয়। এসময় অন্যান্য সন্ত্রাসীরা তাকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে অঘাত করতে থাকে। রুবেল এসময় হাত দিয়ে নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টা করলে তার ডান হাতের তিনটি আংগুল কেটে যায়। সন্ত্রাসীদের হামলায় তিনি মাটিয়ে লুটিয়ে পড়লে তারা তাকে মৃত ভেবে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। পরে স্থানিয় লোকজন এগিয়ে এসে গুরুতর আহত সাদিকুর রহমান রুবেলকে উদ্বার করে নগরীর সোবহানীঘাটস্থ ওয়েসিস হাসপাতালে ভর্তি করেন।
এ ঘটনায় আহত ভিকটিম রুবেল মামলা করতে এসএমপির শাহপরান থানায় যান। কিন্তু থানার ডিউটিরত এএসআই কামরুল ইসলাম (পিপিএম) জানান যেহেতু ঘটনার সাথে আওয়ামী লীগের সিলেট মহানগরের শীর্ষ কয়েকজন নেতার নাম এসেছে সে কারণে এই মূহুর্তে মামলা নেওয়া সম্ভব নয়।
সূত্র জানিয়েছে ২০২৩ সালের ২ মে রাত আনুমানিক ১১ টার দিকে তরুণ রাজনীতিবিদ ব্যবসায়ী ও এলডিপি নেতা সাদিকুর রহমান রুবেল এর উপর আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক আহমদের নেতৃত্বে দ্বিতীয় দফায় আবার হামলার ঘটনা ঘটে। তিনি সিলেট চেম্বার ভবনে সিলেটের ব্যবসায়ীদের একটি গুরুত্বপুর্ণ সভা শেষে বাসায় ফেরার পথে একটি সাদা প্রাইভেট কার তাকে অনুস্মরণ করতে থাকে। সোবহানীঘাট এলাকায় আসার পর কারটি তার পথ আটকায়। এসময় প্রাইভেট কার থেকে নেমে আসেন আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক আহমদ, তার অন্যতম সহযোগী সুজেল তালুকদার, মিন্টু নাছির ও আরো কয়েক জন। কোনো কিছু বুঝে উঠার আগেই তারা তার উপর হামলে পড়েন। তারা তাকে লোহার পাইপ ও হকিস্টিক দিয়ে বেদম পেটাতে থাকেন। পরে আশ-পাশের লোকজন এগিয়ে এসে উদ্বার করে প্রথমে তাকে নিকটস্থ ইবনেসিনা হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে পরিবারের লোকজন ঘটনা জানতে পেরে হাসপাতালে ছুটে আসেন। ঘটনার দুদিন পর আহত রুবেল এ ঘটনায় মামলা করতে শাহপরান থানায় গেলে সেখানেও মামলা করতে পারেননি। খবর পেয়ে আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক আহমদ ৩ জুলাই ২০২৩ আহত এলডিপি নেতা রুবেলকে হুমকী দেন যে, এসব ঘটনায় কোনো মামলা বা জিডি করলে এর পরিণতি হবে ভয়াবহ। তিনি বলেন এবারতো বেঁচে গেছিস, পরবর্তিতে তোর লাশ ও খুঁজে পাওয়া যাবে না। এর প্রায় দুই মাস আগে আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক আহমদের অন্যতম সহযোগী সন্ত্রাসী সুজেল তালুকদার, মিন্টু ও নাছির নগরীর প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী ও এলডিপি নেতা সাদিকুর রহমানের কাছে ১৫ লাখ টাকা চাদা দাবী করে। তাদের অব্যাহত হুমকী-ধামকীতে তিনি তার পরিবারের কথা চিন্তা করে ৫ মে ২০২৩ তাদের ১ লাখ টাকা দিতে বাধ্য হন। কিন্তু এরপরও তারা কান্ত হয়নি। পরবর্তিতে সন্ত্রাসীরা নিয়মিত তার বাসায় গিয়ে তার মা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের চাঁদার জন্য চাপ দিতে থাকে।
এদিকে গত ৫ আগষ্ট ২০২৪ আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকর্মী এলডিপি নেতা সাদিকুর রহমান রুবেল এর কালিঘাটস্থ তাদের পারিবারিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান “মেসার্স বাছন মিয়া এন্ড সন্স” এ হামলা ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। এসময় সন্ত্রাসীরা দোকানের ক্যাশে রক্ষিত প্রায় নগদ ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা লুট করে নিয়ে যায়।
অপরদিকে একই দিন বিকেল সাড়ে ৫ টার দিকে ৩০/৩৫ জন সন্ত্রাসী এলডিপি নেতা সাদিকুর রহমান রুবেল এর উপশহরস্থ ব্লক এইচ রোড নং ৫ এর ৪৩ নং বাসায় হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। সন্ত্রাসীরা এসময় বাসা থেকে প্রায় ৩৯ ভরি স্বর্নালংকার নগদ ৩ লাখ টাকা বিদেশী ডলার সহ মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে যায়। সন্ত্রাসীরা পুরো বাসাজুড়ে ব্যাপক অরাজকতা চালায়। তারা হন্যে হয়ে সাদিকুর রহমান রুবেলকে খুঁজতে থাকে এবং বলতে থাকে তাকে পেলে এমনভাবে হত্যা করবে যেনো পরিবারের লোকজনও তার লাশ চিনতে না পারে।
এ ঘটনায় তরুণ এলডিপি নেতা ব্যবসায়ী সাদিকুর রহমান রুবেলসহ তার পরিবারের সদস্যরা চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। এ অবস্থায় তার দেশে ফেরা ও যেমন সম্ভব নয়, তেমনি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান-বাসা বাড়ি ও সহায় সম্পদ লুটপাটের ঘটনায় তিনি প্রায় নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। এ ব্যাপারে তিনি আন্তর্জাতিক বিভিন্ন হিউম্যান রাইটস সংস্থা সমূহের আশু হস্থক্ষেপ কামনা করেছেন।