সুনামগঞ্জের শাল্লায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন হাওর রক্ষা বাঁধের (পিআইসি) কমিটিতে লেনদেনের একাধিক অভিযোগ এবং পিআইসি বন্টনে বৈষম্যের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করে বিএনপির অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের কিছু নেতৃবৃন্দ ও আবেদনকারীরা।
শনিবার রাতে উপজেলা কম্পাউন্ডের বাহিরে বিভিন্ন শ্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ করা হয়েছে। এ নিয়ে তৈরি হয় নানান সমস্যা।
তবে এই সমস্যা জানতে পেরে তাৎক্ষণিক সমাধানের জন্য জেলা প্রশাসক শাল্লার ইউএনওকে ফোন করে পিআইসির চূড়ান্ত তালিকা স্থগিত করার জন্য নির্দেশ দেন এমনটাই জানান শাল্লার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম তারেক সুলতান।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো: ইলিয়াস হোসেনকে ফোন দিলে তিনি ফোন কেটে দিয়ে, টেক্সট ম্যাসেজ করে জানান ‘ইন এ মিটিং’। অর্থাৎ তিনি একটি মিটিংয়ে আছেন।
জানতে চাইলে শাল্লা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম তারেক সুলতান প্রতিবেদকে বলেন, আমরা আজকে ১টা পিআইসির উদ্বোধন করেছি উজানগাঁও। পিআইসির নাম্বার কত বললে ? তিনি তা বলতে পারেননি! তিনি বলেন এসও সাহেবকে কল দিলে জানতে পারবেন। আর বাকি ১১৪ টি পিআইসি ডিসি স্যার স্থগিত করতে বলছেন। পরবর্তী নির্দেশনা আসলে নীতিমালা মেনেই কার্যক্রম করা হবে।
এব্যাপারে পাউবোর সেকশন কর্মকর্তা (এসও) রিপন মাহমুদ জানান, আজকে ছায়ার হাওর উপ-প্রকল্পের ৫৬ নাম্বার পিআইসি উজানগাঁওয়ে উদ্ধোধন করা হয়েছে। গতকাল উদ্ধোধনের স্বার্থে একটি কমিটি অনুমোদন করা হয়। বাকিগুলো আমাদের কমিটির সম্মানীত সদস্যগন একমত হতে পারে নাই। বাহিরে তাদেরই দলীয় লোকজন উত্তেজিত। পরে ডিসি স্যারকে বললে উনিই বাকিগুলো স্থগিত রাখতে বলেছেন। এক প্রশ্নের জবাবে, তিনি বলেন উপজেলার ওয়েবসাইটে কয়েকদিন আগে বাংলা তালিকায় ১১৪ টি প্রকল্পের উল্লেখ থাকলেও পরে ম্যাজারমেন্ট দিয়ে জেলা থেকে ১১৫ টি অনুমোদন করা হয়েছে। এখন টুঁকচানপুর ১ টি পিআইসি বাড়তে পারে। নদীর পাড় ভাঙ্গার কারণে ঐখানে পিআইসি দেওয়া প্রয়োজন। সর্বমোট ২৪ কোটি ৮২ লক্ষ টাকায় ৮৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য বাঁধের কাজ করা হবে। আর টুঁকচানপুরের এটা পরবর্তীতে জেলা থেকে অনুমোদন করাব।
হঠাৎ করে বিক্ষোভ মিছিল করতে দেখা যায় উপজেলা কম্পাউন্ডারের বাহিরে এবং বলতে শোনা যায়, আওয়ামী লীগের দোসররা হুশিয়ার সাবধান। সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে একশন একশন, দালালদের বিরুদ্ধে একশন একশন। পিআইসিতে বৈষম্য মানিনা, মানব না। এছাড়াও পিআইসি কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তারেক সুলতান ও সদস্য সচিব পানি উন্নয়ন বোর্ডের সেকশন অফিসার (এসও) রিপন মাহমুদ, সদস্য উপজেলা বিএনপির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহবুব সোবহানী চৌধুরী ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আউয়ালের বিরুদ্ধে। এসময় বিক্ষোভে শ্লোগান দেন যুবদলের আহ্বায়ক রাজ্জাক মিয়া। এর আগে আরেকবার দুপুরে শহীদ মিনারের সামনে বিক্ষোভ করেছিল বেশ কিছু মানুষ। ঐসময় বিএনপি, অঙ্গ সংগঠনের কিছু নেতাকর্মীকেও দেখা যায়। তবে পিআইসি পাওয়ার জন্য টাকা লেনদেনের একাধিক ভিডিও বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এনিয়ে এলাকার মানুষের মাঝে ব্যাপক সমালোচনা চলছে।
বিক্ষোভ মিছিলের শব্দ শুনে উপজেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি, বাহাড়া ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ও পিআইসি কমিটির সদস্য জাকির মিয়া তাদের সাথে কথা বলেন। তিনি বলতে শুনা যায়, আপনারা শান্ত হোন হড্ডগোল করবেন না। আমরা পিআইসির কোন সিদ্ধান্ত করিনি। সামনে ১৬ই ডিসেম্বর এরপর আমরা আপনাদের সাথে বসে আলাপ-আলোচনা করেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিব। এসময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, সম্পাদক সহ আরো অনেকেই।
এবিষয়ে বিএনপির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও পিআইসি কমিটির সদস্য মাহবুব সোবহান চৌধুরী বলেন, বিএনপিকে কলঙ্কিত করার জন্য এগুলো জামাতের উস্কানীতে হচ্ছে। ইউএনও এবং এসও ৮৮ টি পিআইসি এককভাবে অনুমোদন করেছিল পরে আমরা আপত্তি জানাই। জামাতের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য এগুলো বিএনপির বিরুদ্ধে রটনা করছে। পিআইসি লেনদেনের ভিডিও বিষয়ে বলেন, কয়েকজন মানুষ তাদেরকে চাপ দিয়ে বলাচ্ছে। আমি এই মিথ্যা প্রোপাগান্ডার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিব। আরেক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, পিআইসি থেকে আওয়ামী লীগকে বিতাড়িত করা আইনগত ভাবে আছে কিনা এটাও দেখার বিষয়।
অন্যদিকে বিএনপির সাবেক সেক্রেটারি ও পিআইসি কমিটির সদস্য আব্দুল আউয়াল জানান, আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা বক্তব্য দেওয়া হয়েছে। আমি এর প্রতিবাদ জানাব। বিক্ষোভকারী কে কি বলল এগুলো তাদের বিষয়। মূলকথা হচ্ছে যারা প্রকৃত কৃষক ন্যায্য ও সচ্ছতার ভিত্তিতে তারাই পিআইসি পাবে। এখানে আওয়ামীলীগ কোন শব্দ না প্রকৃত কৃষক পাবে পিআইসি। তবে বিগত দিনে বিএনপির নির্যাতিত যারা তারাই ন্যায্যতায় পিআইসি পাবে। ডিসি সাহেব ইউএনওকে আপাতত পিআইসি বন্ধ রাখার জন্য বলছেন। শুনেছি আজকে একটা পিআইসি উদ্বোধন হবে আমি যায়নি। বাকিগুলো ডিসি সাহেবের অর্ডার আসলে ন্যায্যতার ভিত্তিতেই প্রকৃত কৃষকরা যাতে পায় এভাবেই কার্যক্রম হবে।