সিলেট সীমান্তে প্রতিদিন ধরা পড়ছে কোটি টাকার চোরাচালান। সীমান্ত পেরিয়ে অবৈধভাবে এসব পণ্য নিয়ে আসছে চোরাকারবারি সিন্ডিকেট। বাংলাদেশ থেকেও যাচ্ছে বিভিন্ন পণ্য। প্রতিদিন কোটি টাকার চালান জব্দ হলেও দমছে না চোরাকারবারিরা। চোরাকারবারে অধিক মুনাফা হওয়ায় বিশাল বিশাল চালান জব্দের পরও এ পথ ছাড়ছে না সিন্ডিকেট।
এছাড়া চোরাই পণ্যের চালান প্রতিদিন জব্দ হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে সিন্ডিকেটের সদস্যরা। চলতি মাসে সিলেট ও সুনামগঞ্জের বিভিন্ন সীমান্ত থেকে প্রায় ২০ কোটি টাকার চোরাচালানকৃত পণ্য জব্দ হলেও ধরা পড়েনি কোন চোরাকারবারী।
সিলেট ও সুনামগঞ্জ সীমান্তে সর্বশেষ গত তিনদিনে বিজিবির হাতে ধরা পড়ে প্রায় ৪ কোটি টাকার চোরাচালানকৃত পণ্য। কিন্তু অভিযানে কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া চলতি মাসের ১৯ দিনে বিজিবি ৪৮ ও ১৯ ব্যাটালিয়নের বিভিন্ন বিওপির জোয়ানরা অভিযান চালিয়ে অন্তত ২০ কোটি টাকার পণ্য জব্দ করেছে।
জব্দকৃত ভারতীয় পণ্যের মধ্যে রয়েছে- চিনি, ভারতীয় শাড়ী, থ্রি-পিস, শীতের কম্বল, সানগøাস, প্রসাধনী সামগ্রী, চকলেট, প্রসাধনী সামগ্রী, গরম মশলা, চা পাতা, সুপারি, সানগøাস, গরু, মহিষ, মোটরসাইকেল ও সিএনজি অটোরিকশার যন্ত্রাংশ। বাংলাদেশ থেকে পাচারকালে জব্দ হয়েছে রসুন, শিং মাছ, ইলিশ মাছসহ বিভিন্ন পণ্য।
সূত্র জানায়,
সিলেটের তিনদিন ঘিরে ভারত সীমান্ত। এই সীমান্ত ঘিরে চোরাকারবারীরা শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। বিভিন্ন পণ্যের মূল্যে দুইদেশে ব্যাপক তারতম্য থাকায় চোরকারবারের মাধ্যমে বড় মুনাফা করে থাকে সিন্ডিকেটের সদস্যরা।
সিলেটের গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও জৈন্তাপুর সীমান্ত দিয়ে সবচেয়ে বেশি চোরাচালান হয়ে থাকে। এই তিন উপজেলার সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে চোরাকারবারিরা ভারত থেকে বিভিন্ন পণ্য নিয়ে আসে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আসে চিনি। বাংলাদেশ থেকে ভারতে চিনির মূল্য প্রায় অর্ধেক হওয়ায় চোরাকারবারিরা প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার চিনি নিয়ে আসে।
তবে ৫ আগস্টের পর বিজিবি ও পুলিশের নজরদারি বাড়ায় চিনি চোরাচালান কিছুটা কমে আসে। কিন্তু বেড়ে যায় কাপড়, প্রসাধনী সামগ্রী, চকলেটসহ অন্যান্য পণ্য চোরাচালান। ভারত থেকে চোরাইপথে আসা বিশাল চালান প্রতিদিনই ধরা পড়ছে। একেক দিন অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন সীমান্ত থেকে কোটি টাকার উপরে ভারতীয় পণ্য জব্দ করছে বিজিবি।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে চালানো এসব অভিযানে ভারতীয় পণ্যের চালান জব্দ হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায় চোরাকারবারী সিন্ডিকেটের সদস্যরা। চলতি মাসে প্রায় ২০ কোটি টাকার পণ্য জব্দ হলেও ধরা পড়েনি কোন চোরাকারবারী।
সূত্র আরও জানায়, এসব চোরাকারবারে সিলেটের প্রভাবশালী অনেক কোটিপতি ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন পেশার ব্যক্তি বিনিয়োগ করে থাকে। এজেন্ট ও নি¤œ আয়ের মানুষ দিয়ে কৌশলে তারা এই কারবার করে থাকেন। ফলে ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যান তারা। মাঝে মধ্যে অভিযানকালে যারা ধরা পড়ে তাদের বেশিরভাগই পরিবহন চালক, হেলপার কিংবা চালানের বাহক। সিন্ডিকেটের মূলহোতারা থেকে যান পর্দার আড়ালে নিরাপদ।
চোরাচালান প্রসঙ্গে বিজিবি ৪৮ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্ণেল মো. হাফিজুর রহমান জানান, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে সীমান্তে নিরাপত্তারক্ষা ও চোরাচালান প্রতিরোধে বিজিবি নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে। এছাড়া সীমান্তে গোয়েন্দা তৎপরতাও বাড়ানো হয়েছে।