সিলেটের পাথর কোয়ারিগুলোতে চলছে হরিলুট। রাতদিন সমানতালে উৎসবের আমেজে চলছে বালু ও পাথর উত্তোলন। নির্বিচারে বালু-পাথর উত্তোলনের ফলে হুমকির মুখে পড়েছে জাফলং ও গোয়াইন সেতু। সেতুর নিচ থেকে বালু ও পাথর উত্তোলন করায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে সেতু দুটি। শুষ্ক মৌসুমে নদীর পানি কমে যাওয়ায় সেতু দুটির পিলারের প্ল্যাটফর্মের নিচ থেকে মাটি সরে গিয়ে লোহার ‘কেজিং’ বের হয়ে এসেছে। নির্বিচারে বালু ও পাথর লুট করে সেতু ঝুঁকিতে ফেলার জন্য প্রশাসনের নির্লিপ্ততাকে দায়ি করছেন পরিবেশবাদীরা।
সিলেট পর্যটন প্যাকেজ
সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার পিয়াইন নদীর উপর নির্মিত জাফলং সেতুর নিচ থেকে চলছে বালু ও পাথর উত্তোলন। আদালত ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রনালয়ের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বালু ও পাথর লুট চললেও বেশিরভাগ সময়ই প্রশাসন রয়েছে নির্লিপ্ত। পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে মাঝে মধ্যে লোক দেখানো অভিযানে সীমাবদ্ধ প্রশাসনের দায়িত্ব পালন। প্রশাসনের নমনীয়তার সুযোগে পাথর ও বালুখেকোরা এখনো লুট চালিয়ে যাচ্ছে।
সিলেট পর্যটন প্যাকেজ
স্থানীয়রা জানান, জাফলংয়ের মুমিনপুরের জুলহাস ও জাফলং চা বাগানের পঞ্চায়েত সভাপতি নিরঞ্জন গোয়ালাসহ একটি সঙ্গবদ্ধ চক্র সেতুর পাশে বালুরঘাট তৈরি করেছেন। তাদের শেল্টারে অবৈধভাবে উত্তোলিত বালু ও পাথর পরিবহন হচ্ছে। অবৈধভাবে নির্বিচারে বালু ও পাথর উত্তোলনের কারণে জাফলং সেতুর পিলারের নিচের প্ল্যাটফর্ম ভেসে ওঠেছে। মাটি সরে গিয়ে প্ল্যাটফর্মের নিচের লোহার ‘কেজিং’ বের হয়ে গেছে।
ফলে প্রায় ৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ৩৬০ মিটার দীর্ঘ সেতুটি তার স্বাভাবিক শক্তি হারাতে বসেছে। ২০১৮ সালে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া সেতুটি মাত্র ৬ বছরের ব্যবধানে বালু ও পাথরখেকোদের জন্য ঝুঁকিতে পড়তে যাচ্ছে।
গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সাইদুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, সেতুর পাশ থেকে যন্ত্র দিয়ে বালু উত্তোলনের মৌখিক অভিযোগ পেয়েছেন। জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জাফলং সেতুর মতো একই অবস্থা গোয়াইনঘাটের গোয়াইন সেতুর। সম্প্রতি উপজেলার পশ্চিম আলীরগাঁও ইউনিয়নের পূর্ণানগর গ্রামের একদল লোক সেতু সংলগ্ন এলাকা থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন শুরু করেন। পরিবেশ ও সেতু বিধ্বংসী এমন কর্মকান্ড নিয়ে এলাকার তরুণরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সোচ্চার হলে টনক নড়ে উপজেলা প্রশাসনের। উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসন বালুখেকোদের ধরতে অভিযান চালালেও খবর পেয়ে আগেই চম্পট দেয় তারা।
অবৈধভাবে বালু উত্তোলন নিয়ে ফেসবুকে লেখালেখি করায় পূর্ণানগর গ্রামের মৃত আবদুর রাজ্জাকের ছেলে ফারুক আহমদের বাড়িতে হামলা চালায় স্থানীয় বালুখেকোরা। হামলা ও মারধরের ঘটনায় অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন গোয়াইনঘাট থানার ওসি সরকার তোফায়েল আহমদ। গোয়াইন সেতুর নিচ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে ওই সেতুর প্ল্যাটফর্মের নিচের ‘কেজিং’ বের হয়ে গেছে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ
সিলেট জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী আমির হোসেন জানান, সেতুর প্ল্যাটফর্মের নিচ থেকে মাটি সরে গিয়ে ‘কেজিং’ বের হওয়ার খবরটি তিনি জেনেছেন। ছবি তুলে ঢাকায় সওজের ডিজাইন টিমের কাছে পাঠানো হলে তারা এখনো সেতুগুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছেন না। তবে কয়েক দিনের মধ্যে একটি টিম সরেজমিন পরিদর্শনে আসার কথা রয়েছে।
এদিকে, পরিবেশ বিধ্বংসী এসব কর্মকান্ডের জন্য প্রশাসনের নির্লিপ্ততাকে দায়ি করেছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবীদ সমিতি বেলা, সিলেটের সমন্বয়ক এডভোকেট শাহ শাহেদা আক্তার। তিনি বলেন, আইন কানুনের তোয়াক্কা না করে প্রকাশ্যে অবৈধভাবে বালু-পাথর উত্তোলনের উৎসব চললেও প্রশাসন নির্লিপ্ত। তাদের নিষ্ক্রিয়তার সেতুর নিচ থেকে বালু ও পাথর উত্তোলনের সাহস পেয়েছে দুর্বৃত্তরা।
এ প্রসঙ্গে সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. শের মাহবুব মুরাদ জানান, অবৈধভাবে বালু ও পাথর উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান হচ্ছে।