সামিয়ান হাসান, বিয়ানীবাজার:
কুয়াশার আবরণ ভেদ করে প্রায় প্রতিদিনই নিজাম উদ্দিন নামের একজন ফেরিওয়ালার আগমন হয় পৌরশহরে। বিক্রির আশায় কাঁধে ভার বহন করে লালশাক বয়ে নিয়ে এসেছেন নিজের সবজির ক্ষেত থেকে। শুধু নিজাম উদ্দিন নয় সকাল থেকেই বিয়ানীবাজার পৌরশহরের বিভিন্ন গলিতে এরকম আরোও কয়েকজন ফেরীওয়ালাদের দেখা যায়। প্রতিদিন উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে পৌরশহরে এনে লালশাক বিক্রি করে থাকেন এসব ভাসমান লালশাক বিক্রেতারা।
জানা যায়, সবজির তালিকায় শাক-সবজির মধ্যে অতি পরিচিত হচ্ছে লালশাক। চিকিৎসকরাও রোগীর দ্রুত আরোগ্য লাভে সবুজ সবজির পাশাপাশি এই লালশাক খাবার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কারণ লালশাকের মধ্যে কিছু প্রয়োজনীয় উপাদান রয়েছে যা মানবদেহের জন্য খুবই উপকারী।
এ বিষয়ে লালশাক বিক্রেতা নিজাম উদ্দিন বলেন, বছরের এই সময়টায় আমি সবজি বিক্রি করে সংসার চালাই। এখন লালশাকের সময় তাই লালশাক বিক্রি করছি। আমার প্রায় ৩০ শতক ফসলের ক্ষেতে লালশাকের পাশাপাশি ফরাস, শীম, লাউ, টমেটো এবং মুলা চাষ করেছি। সবজি বিক্রি করেই আমার সংসার চলে। তাছাড়া অভাবের সংসারে ছেলেমেয়েদের কে লেখাপড়াও করাচ্ছি এসব সবজি বিক্রি করেই।
এ বিষয়ে সালাম নামের এক ফেরীওয়ালা বলেন, মোটামুটি দাম ভালো পাই সেজন্য ভোরে ক্ষেত থেকে সংগ্রহ করে বাজারে প্রতিদিন সকালে লালশাক ভারে করে নিয়ে আসি। এগুলো নিজের জমিতে চাষ করা শাক। গোবর-সার ছাড়া আর কিছুই দেইনি। খেতে খুবই সুস্বাদু। দরদাম সম্পর্কে ওই কৃষক বলেন, দুই আঁটিতে প্রায় এক কেজি লালশাক আছে। কেজিপ্রতি দাম পড়ে প্রায় ৩০ টাকা। আমি আজ মোট ৬০ আঁটি শাক নিয়ে এসেছি। আশা করছি, সব আঁটিগুলো বিক্রি হয়ে যাবে।
জায়গার পরিমাণ এবং চাষাবাদ সম্পর্কে অপর লালশাক বিক্রেতা রমিজ মিয়া বলেন, নিজের ১৫ শতক (শতাংশ) জমিতে প্রায় এক মাস আগে লালশাক লাগিয়েছি। খরচ হয়েছে প্রায় দুই হাজার টাকা। আমি নিজেই সবজি ফলাই। নিজেই কাঁধে করে সবজি বিক্রি করি। তার বাড়ি উপজেলার লাউতা ইউনিয়নে।
এ বিষয়ে বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আবু ইসহাক আজাদ বলেন, লালশাকে সবচেয়ে বেশি ভিটামিন ‘এ’ রয়েছে। এর জন্য আমাদের দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে বা দৃষ্টিশক্তির কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে। এ ছাড়াও এখানে এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় ক্যানসার প্রতিরোধ করে। রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা স্বাভাবিক রেখে লালশাক হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। মস্তিস্ক এবং হৃদপিন্ডকে শক্তিশালী করতে লালশাক উপকারী।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনিসুজ্জামান বলেন, বিয়ানীবাজারের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এবছর সবজির ব্যাপক চাষ হয়েছে। তারমধ্যে লালশাক, শীম, লাউ, ফরাস, টমেটো, মুলা, বাধাকপি, ফুলকপি অন্যতম। এখানকার বেশিরভাগ কৃষক তাদের ক্ষেতের ফসল বিক্রি করেই নিজেদের সংসার চালান। এজন্য আমরা উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে তাদেরকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ, বীজ এবং সহযোগীতা করে থাকি। যাতে তারা কোন রকম ক্ষতির সম্মখিন না হয়ে ভালোবাবে সবজি চাষ করতে পারে।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, বিয়ানীবাজার পৌরশহরে লালশাক বিক্রি করে এমন ফেরীওয়ালার সংখ্যা অর্ধশতাধিক। তারা সকালে আসেন, বিকেলে নিজের উৎপাদিক শাক বিক্রি করে বাড়ি ফিরেন পরিবারের আহার নিয়ে। তাদের জীবনে বড় কোন স্বপ্ন না থাকলেও ছেলে মেয়েদেরকে শিক্ষিত করার একটা স্বপ্ন আছে। হয়তো সন্তানরা শিক্ষিত হয়ে চাকরি করতে পারলে তাদের অভাবের সংসারে আলো জ¦লবে। প্রান্তিক এসব কৃষক পরিবারে নানা অভাব- অনটন থাকলেও দৈনন্দিন তাড়াহুড়ো নেই। তাদের জীবন চলছে অল্প পাওয়ায়-মানুষের ভালোবাসায়।