নদীজুড়ে হীরের টুকরোর মতো সাদা সাদা পাথর। এই পাথরের কারণে এলাকার নামই হয়ে উঠেছে সাদা পাথর। অথচ এই সাদাপাথরই এখন পাথরশূণ্য হয়ে পড়েছে।
ভারত সীমান্তবর্তী কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ এলাকার পর্যটনকেন্দ্র ‘সাদা পাথর’ এলাকার পাথর রাতের আঁধারে চুরি করে নিয়েছে একটি ।
এ পর্যটনকেন্দ্রের ভেতর প্রবহমান স্বচ্ছ স্রোতধারার ধলাই নদের সবখানে যেন বিছিয়ে আছে কোটি কোটি ছোট-বড় সাদা পাথরের বিছানা। দুই মাস আগেও যেখানে পাথরের জন্য হাঁটা যেত না, আজ সেখানে যেন সম্পূর্ণ ভিন্ন দৃশ্য। জানা গেছে, গভীর রাতে একটি চক্র এই কেয়ারি থেকে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার পাথর চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে বড় আকারের বোল্ডার (বড় পাথর) আগের মতো চোখে পড়ে না। কমছে ছোট পাথরের সংখ্যাও।
পর্যটনকেন্দ্র এলাকার ব্যবসায়ী আইয়ুব খান জানান, এখন পর্যটকও কম। এর মধ্যে প্রায় রাতেই ৫০ থেকে ১০০ নৌকা দিয়ে পাথর চুরি করে নেওয়া হচ্ছে। গত রমজান থেকে কয়েক লাখ ঘনফুট পাথর চুরি করা হয়েছে।
গত মঙ্গলবার সরেজমিন পরিদর্শনকালে কথা হয় পর্যটনকেন্দ্রে দায়িত্বরত আনসার কমান্ডার আবদুল হেকিমের সঙ্গে। তিনি জানান, তারা দু’জন প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। রাতে তাদের কেউ থাকেন না। পাথর চুরির কথা স্বীকার করে তিনি জানান, সোমবার সকালেও যখন ডিউটিতে যোগ দেন তখন ৫ থেকে ৭টি নৌকা পাথর চুরির জন্য নদের পূর্বদিকে ছিল। তাদের দেখার পর পালিয়ে যায়। গত রোববার কোম্পানীঞ্জ থানা পুলিশ ৬টি সাদা পাথরবাহী নৌকাসহ ১৭ জনকে আটক ও ১২০ ঘনফুট সাদা পাথর উদ্ধার করে। এর আগে গত ৩০ মে সাদা পাথর চুরির অভিযোগে ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন পশ্চিম ইসলামপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী ভূমি কর্মকতা শিপলু কুমার দে। তার পরও পাথর চুরি রোধ করা যাচ্ছে না।
সরেজমিন দেখা যায়, সাদা পাথর পর্যটনকেন্দ্রের পাথর চুরি করে পার্শ্ববর্তী দয়ার বাজার, কালাইরাগ ও নতুন বাজার এলাকায় ধলাই নদের চরে স্তূপ করে রাখা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা, পর্যটন ব্যবসায়ী ও বারকি শ্রমিকরা (বালু-পাথর-জলমহালে কাজ করা শ্রমিক) অভিযোগ করেন, পাথর চুরির সঙ্গে পুলিশ ও আনসার সদস্যরাও জড়িত। পর্যটনকেন্দ্রে দায়িত্বরত ভিডিপি সদস্য মইনুল ইসলাম হেলাল ও আনসার সদস্য রফিকুল ইসলাম স্থানীয় বাসিন্দা হওয়ার সুবাদে চুরিতে মদদ দিচ্ছেন। মইনুল হেলাল ভিডিপি সদস্য হওয়ার পরও আনসারের পোশাক পরে দায়িত্ব পালন করেন। তাদের কথার সত্যতাও মেলে।
হেলাল নিজেকে ভিডিপি সদস্য স্বীকার করে জানান, যখন দায়িত্ব পালন করেন তখন আনসারের পোশাক পরেন। সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে পুলিশের বিরুদ্ধেও।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি গোলাম দস্তগীর আহমদ বলেন, পুলিশ রুটিন দায়িত্ব পালন করে। অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই।
অভিযোগ আছে, বিজিবির কালাইরাগ ক্যাম্প ও ধলাই চেকপোস্টের সদস্যদের ম্যানেজ করে বা চোখ ফাঁকি দিয়ে পাথর চুরি করা হয়। বিজিবির কালাইরাগ ক্যাম্প কমান্ডারকে ফোন করা হলে তিনি সরাসরি ছাড়া কথা বলবেন না জানিয়ে লাইন কেটে দেন।
পাথর চুরি প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুনজিত কুমার চন্দ বলেন, উপজেলা প্রশাসন সব সময় হার্ডলাইনে। পাথর চুরি রুখতে একাধিক অভিযানসহ মামলাও করা হয়েছে।