পান্না লাল সোম ট্রাস্ট শিক্ষাবৃত্তি বিতরণ অনুষ্ঠানে বক্তারা
‘বিভেদহীন মানবিক সমাজ গঠনই মূল উদ্দেশ্য’
বিভেদহীন মানবিক সমাজ গঠনই সকল সমাজকর্মের মূল উদ্দেশ্য। এমন সমাজ গঠনের স্বপ্নেই নিজের অবস্থান থেকে কাজ করতেন বীর মুক্তিযোদ্ধা কমরেড পান্না লাল সোম। জীবৎকালে তিনি মানুষের জন্য মঙ্গলময় যা করতে চেয়েছেন তার প্রভাব পড়েছে পরবর্তী প্রজন্মের ওপরও। এই ঐক্য ও সাম্যের আহ্বান এক থেকে অন্যে ছড়িয়ে পড়লেই তৈরি হবে সমতা ও মানবিকতার সমাজ। যেখানে ধর্ম, সম্প্রদায়, জাতি বা ধনী-গরিব দিয়ে মানুষকে ভাগ করা হবে না।
বীর মুক্তিযোদ্ধা কমরেড পান্না লাল সোমের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সেক্যুলার বাংলাদেশ মুভমেন্ট ইউকের উদ্যোগে আয়োজিত ‘পান্না লাল সোম ট্রাস্ট শিক্ষাবৃত্তি’ বিতরণ অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।
শুক্রবার (২০ নভেম্বর) সিলেট শহীদ সোলেমান হল আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, শারীরিক সীমাবদ্ধতা থাকলেও পান্না লাল সোম কখনো নিজেকে হারতে দেননি। জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত তিনি বঞ্চিত মানুষের জন্য ভেবেছেন এবং কাজ করেছেন।
শিক্ষাবৃত্তি বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিলেট রেঞ্জের অতিরিক্ত উপ মহাপুলিশ পরিদর্শক জয়দেব কুমার ভদ্র বলেন, বঞ্চনাকে শক্তি, পিছিয়ে থাকাকে গতি হিসেবে কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। তাহলেই সমাজ থেকে বিভেদ দূর হবে। অন্যের আশায় বসে না থেকে নিজের মানসিক শক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। আর এই লড়াইয়ে পান্না লাল সোমের মতো মানুষ প্রেরণা দিয়ে যাবেন সবসময়।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিমের সভাপতিত্বে এবং নারী নেত্রি ইন্দ্রানী সেন শম্পার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, আহলে ছুন্নত ওয়াল জামাত বাংলাদেশ সিলেটের সভাপতি ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের পলিটিক্যাল স্টাডিজের সহকারি অধ্যাপক মো. এমদাদুল হক, জগদ্বন্ধু আশ্রম সিলেটের অধ্যক্ষ বন্ধুপ্রতিম ব্রহ্মচারী ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া জার্নালিস্ট এসোসিয়েসন (ইমজা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক সজল ছত্রী।
অনুষ্ঠানের শুরুতে কমরেড পান্না লাল সোমের সংক্ষিপ্ত জীবনী পাঠ করেন সংগঠক মুনমুন বিশ^াস। করোনার কারণে প্রবাস থেকে আসতে না পারা সংগঠনের অন্যতম পরিচালক পুষ্পিতা গুপ্তার পক্ষ থেকেও তিনি শুভেচ্ছা জানান। এছাড়া আরো বক্তব্য রাখেন শ্রীমঙ্গলের বিশিষ্ট সংস্কৃতিকর্মী দেবাশীষ চৌধুরী রাজা, ঝুমা সেন, সাবিত্রী সেন, পুলক সেন, পিন্টু সরকার, কৃষ্ণা সূত্রধর, শারদীয়া বিশ^াস প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে স্কুল, কলেজ ও বিশ^বিদ্যালয় পড়–য়া সাত শিক্ষার্থী রাবেয়া আক্তার রোকসানা, অমিত সরকার, উত্তরা সেন, শেফালি ওরাং, অমিয় কান্তি দাশ, পৃথা দেব ও দীপা দেবের হাতে শিক্ষাবৃত্তির অর্থ ও ক্রেস্ট তুলে দেন অতিথিরা।
উদ্যোক্তারা জানান, এর আগে চলতি বছরের ১৫ নভেম্বর পঞ্চগড়ে বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষার্থী রনি চন্দ্র, মো. রাহিমুল ইসলাম, মহাদেব রায়, কলেজ শিক্ষার্থী বিষ্ণু দাস ও তৃতীয় লিঙ্গের মোমেনা আক্তারকে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করা হয়।
প্রসঙ্গত, ১৯৪১ সালের ৯ জানুয়ারি করিমপুর চা বাগানে জন্মগ্রহণকারী কমরেড পান্না লাল সোম দীর্ঘদিন চা বাগানে কর্মরত ছিলেন। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকলেও তিনি ছিলেন নিজের বলে বলিয়ান এক মানবদরদি চরিত্র। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে প্রগতিশীল ও অধিকার আদায়ের সকল আন্দোলনে তিনি ছিলেন সক্রিয় অংশগ্রহণকারী। উগ্রতা ও সংহিসতার বিরুদ্ধে তিনি মানবিকতা, ঐক্য ও সম্প্রীতির প্রচার করেছেন। বঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়ানো, নারী শিক্ষার অগ্রাধিকারে কাজ করেছেন তিনি। তার জীবন ছিল সংগ্রামের, তবে তা ছিল কুসংস্কারমুক্ত সদানন্দের। ২২ আগস্ট ২০১৮ সালে মারা যান এই কর্মবীর। প্রেস-বিজ্ঞপ্তি।