সামিয়ান হাসান, বিয়ানীবাজার : নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে সরকারের প্রচেষ্টা টিসিবির মাধ্যমে পণ্য সরবরাহ। কিন্তু সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলয় পণ্য থাকলেও ডিলারদের কারসাজিতে সেই সেবা থেকে বঞ্চিত সাধারণ মানুষ। প্যাকেজ ছাড়া বিক্রি করছেন না ডিলাররা। কেউ ১২শ টাকা আবার কেউ ৯শ টাকা নির্ধারণ করেছেন প্যাকেজ মূল্য। এ নিয়ে ডিলাররা দিচ্ছেন নানা অজুহাত। আর লকডাউন শুরু থেকেই এ অনিয়ম চললেও টিসিবি কর্মকর্তারা বলছেন, এমন কোনো তথ্যই নাকি নেই তাদের কাছে।
সরেজমিন দেখা যায়, বিয়ানীবাজার উপজেলা প্রশাসনের অদূরে টিসিবির পণ্য বিক্রি চলছে। তবে ডিলার খুচরা বিক্রিতে রাজি নন। নিতে হবে সব পণ্যের প্যাকেজ। এ নিয়ে বাগবিতন্ডা নিম্ন আয়ের ক্রেতাদের সঙ্গে। ক্রেতারা অভিযোগ করেন, নিম্ন আয়ের মানুষ যাতে কম দামে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে পারেন, সেই ব্যবস্থা করেছে সরকার, কিন্তু তারা পণ্য কিনতে পারছেন না।
এ বিষয়ে আম্বিয়া বেগম নামের এক ক্রেতা জানান, তিনি ৫০০ টাকা নিয়ে এসেছেন টিসিবি থেকে তেল, চিনি আর ছোলা কিনতে। কিন্তু ডিলার তাকে পণ্য দিচ্ছে না। পণ্য নিতে হলে তাকে ছয়টি পণ্যই একসঙ্গে নিতে হবে, যার মূল্য ১২৪০ টাকা। কিন্তু তার সেই সামর্থ্য নেই। এ ক্রেতা জানান, গরিব মানুষ ১২৪০ টাকা কীভাবে জোগাড় করবে। আর যে পণ্য তার দরকার নেই, সেটা সে নেবেনই বা কেন। রাহিম আহমেদ নামের আরও একজন ক্রেতা বলেন, গত বছর এমন ছিল না। ক্রেতাদের যে পণ্য প্রয়োজন, সেটাই নিতে পারতেন। কিন্তু এবার ডিলাররা প্যাকেজ বানিয়ে নিম্ন আয়ের মানুষকে বঞ্চিত করছে।
এসব অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে টিসিবি ডিলারদের লোকজন জানালেন, তাদের কিছু করার নেই, সব পণ্য তাদের বিক্রি করতে হবে। এ প্যাকেজ সম্পর্কে টিসিবির কর্মকর্তারা জানেন কি না জানতে চাইলে বলেন, তারা সব জানেন, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ডিলার বলছেন, সব পণ্য বিক্রি করতেই তিনি এ ধরনের প্যাকেজ নির্ধারণ করেছেন। গরিব মানুষ যদি পণ্য নিতে না পারে তাতে তার কিছু করার নেই। বিয়ানীবাজারে দু’জন ডিলার টিসিবির পণ্য বিক্রি করেন। তারা নিয়মিত পণ্য বিক্রি করেনা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ডিলারের লোক জানান, তাদেরকে ছোলা, চিনি, তেল, খেজুর ও ডালের সঙ্গে পেঁয়াজ দেওয়া হয়েছে। একটি করে পণ্য বিক্রি করলে তো বাকি পণ্যগুলো থেকে যায়। তেল ও ডালের বেশি চাহিদা, কিন্তু যে পেঁয়াজ টিসিবি থেকে দেওয়া হয়েছে, তা নিম্নমানের বলে কেউ নিতে চায় না। তাই তাদের প্যাকেজ আকারে বিক্রি করা ছাড়া কোনো উপায় নেই। কয়েক দিন ধরেই এমন অবস্থা চলছে। কিন্তু নিয়মিত পর্যবেক্ষণের কথা থাকলেও টিসিবি কর্মকর্তাদের কোথাও দেখা মেলেনি।
প্যাকেজ হিসাবে বিক্রির বিষয়ও তারা জানেন না বলে জানান টিসিবি সিলেটের আঞ্চলিক প্রধান ইসমাইল মজুমদার। তিনি জানান, ডিলাররা হয়তো দু-তিনটি পণ্য একসঙ্গে বিক্রি করতে পারে; কিন্তু তাই বলে প্যাকেজ বানাবে, এটা কীভাবে সম্ভব। তিনি জানান, ডিলারদের ইতোমধ্যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যে পণ্যই ক্রেতা চাইবে, তা যেন দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশিক নূর বলেন, আমার কাছে এ ধরনের অভিযোগ এর আগে আসেনি। যদি আগে আসতাম তাহলে ব্যবস্থা নিতে পারতাম। এখন এ বিষয়ে জানতে পারলাম আমি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবো।