সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি ::::
সুনামগঞ্জের দক্ষিণ সুনামগঞ্জের মন্দিরে ঢুকে সনাতন ধর্মালম্বীদের বিগ্রহের উপর পা রেখে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার অভিযোগ উঠায় আলিয়া মাদ্রাসায় পড়–য়া কিশোরকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অভিযুক্তের নাম মো. ফাহিম আহমেদ (১৭)। সে ছাতক উপজেলার সিংচাপইড় ইউনিয়নের সিংচাপইড় গ্রামের মো. রিপন মিয়ার ছেলে। যদিও তার বাবা জানিয়েছেন, তারাই ফাহিমকে পুলিশে কাছে সোপর্দ করেছে।
ফাহিম আহমেদ সিংচাপইড় আলিয়া মাদ্রাসার দশম শ্রেণির ছাত্র বলে জানিয়েছেন তার বাবা মো. রিপন মিয়া। ফাহিমের ফেসবুক পোস্টের স্কিনসর্ট শুক্রবার সুনামগঞ্জ জেলায় ভাইরাল হওয়ার পর নড়েচড়ে বসে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসন।
জানা যায়, শুক্রবার দুপুরে ছাতকের জাউয়াবাজার অভিযোগ কেন্দ্রের পুলিশ ফাহিম আহমেদকে গ্রেফতার করতে সিংচাপইড় গ্রামে অভিযান চালায়। তাকে না পেয়ে তার পরিবার ও গ্রামের লোকজনকে ফাহিমকে দ্রুত পুলিশের হাতে সোপর্দ করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়। এরপর তার আত্মীয়-স্বজন ও পরিবারের লোকজন তাকে পার্শ্ববর্তী জগন্নাথপুর থেকে ডেকে এনে শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৫ টায় ছাতক-দোয়ারাবাজার সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার বিল্লাল হোসেনের কাছে তাকে সোপর্দ করে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে অভিযুক্ত ফাহিম আহমেদের পিতা মো. রিপন মিয়া বললেন,‘আমরা পরিবারের সকলে ফাহিমকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছি। এ ঘটনায় আমরা নিজেরা দু:খিত এবং মর্মামহত। আল্লাহ্ রসুলের নিষেধ আছে, অন্যের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত না দেবার। যার যার ধর্ম সে পালন করবে। ফাহিম অপরাধ করেছে, তাই আমরাই তাকে পুলিশের কাছে সমঝে দিয়েছি।’
প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার দুপুরে দক্ষিণ সুনামগঞ্জের পশ্চিম পাগলা ইউনিয়নের ব্রাহ্মণগাঁও গ্রামের শ্রীশ্রী লোকনাথ মন্দিরের ভেতরে ঢুকে বিগ্রহের উপর পা রাখার একাধিক ছবি তোলে ফাহিম। এরপর এসব ছবি তার ফেসবুকে পোস্ট করলে সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার দুপুরে দক্ষিণ সুনামগঞ্জের পশ্চিম পাগলা ইউনিয়নের ব্রাহ্মণগাঁও গ্রামে মামা জিল্লুল হকের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিল ছাতকের সিংচাপইড় গ্রামের ফাহিম আহমেদ। এরপর আরও দুইজনকে সাথে নিয়ে একই গ্রামের শ্রীশ্রী লোকনাথ মন্দিরে যায় সে। তারা মন্দিরের ভেতরে ১৫/৩০ মিনিট সময় অবস্থান করে। মন্দিরের পুরোহিত অদ্বৈত চক্রবর্তী তাদের বাড়ি কোথায় জানতে চাইলে তাদের বাড়ি ছাতক বলে জানায়। এসময় ফাহিম মন্দিরের ভেতরে শ্রী ণৃসিংহ দেব এবং ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কালীয়দমন বিগ্রহের উপর পা রেখে ছবি তোলে। কিন্তু মন্দিরের সিসি ক্যামেরা নষ্ট থাকায় ও পুরোহিত বা অন্য কারো নজরে পরেনি বিষয়টি। এরপর ফাহিম আহমেদ বিগ্রহের উপর পা রাখার ছবি নিজের ফেসবুকে পোস্টে করে। ফাহিমের ফেসবুক পোস্টের স্কিনসট ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে পড়লে পোস্টটি ডিলিট করে ফেলে সে। এই ঘটনায় ফাহিমের বিরুদ্ধে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন ব্রাহ্মণগাঁও গ্রামের শ্রীশ্রী লোকনাথ মন্দির পরিচালনা কমিটি।
সিংচাপইড় আলিয়া মাদ্রাসার কম্পিউটার শিক্ষক মো. খালেদুল ইসলাম বলেন,‘ফাহিম আহমেদ মাদ্রাসার দশম শ্রেণির ছাত্র। শুনেছি সে নাকি ফেসবুকে কি এক পোস্ট দিয়েছিল। পরে সেটা ডিলিট করে ক্ষমা ও দুঃখ প্রকাশ করেছে। শুক্রবার বিকালে তার পরিবারের লোকজন তাকে পুলিশের কাছে দিয়েছে।’
পাগলা গ্রামের বাসিন্দা দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুরঞ্জিত চৌধুরী টপ্পা বলেন,‘ ফাহিমের মামা জিল্লুল হক আমাদের জানিয়েছেন, তাদের ভাগ্না ফাহিম বৃহস্পতিবার তাদের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিল। এই ঘটনায় তার মামা দুঃখ প্রকাশ করেছেন ও মর্মাহত হয়েছেন।’
ব্রাহ্মণগাঁও শ্রীশ্রী লোকনাথ মন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি নান্টু দাস বলেন, ‘বৃহস্পতিবার দুপুরে তিন যুবক মোটরসাইকেল যোগে মন্দির দেখতে এসেছিল। মন্দিরের পুরোহিতকে তারা জানিয়েছে তাদের বাড়ি ছাতকে। তারা মন্দিরে ১৫/২০ মিনিট সময় ছিল। এসময় তারা ছবি তোলেছে কিনা কেউ দেখতে পায়নি। শুক্রবার সকালে হটাৎ করে ফেসবুকে ছবি প্রচার হওয়ার বিষয়টি দেখতে পাই। কেউ মন্দির পরিদর্শন করতে এসে এভাবে আমাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করবে এটা আমরা কল্পনাও করিনি। ’
দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী মুক্তাদির আহমদ বলেন,‘ লোকনাথ মন্দিরের বিগ্রহের উপর পা রাখার ছবি ফেসবুকে পোস্ট করার ঘটনায় থানায় অভিযোগ হয়েছে। ফেসবুকে ছবি পোস্টকারী ফাহিমকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’