যুগভেরী ডেস্ক ::: সারাদেশে যথাযোগ্য মর্যাদা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে আজ মুসলমানদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত হচ্ছে।
অনিশ্চিত ভবিষ্যতের আশঙ্কার মধ্যেই এবারের ঈদ উদযাপিত হচ্ছে। মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ঈদকে ঘিরে যে আনন্দ-উচ্ছ্বাস থাকার কথা তা এবারও ম্লান করে দিয়েছে মহামারি কভিড-১৯।
রাষ্ট্রপতি মো.আবদুল হামিদ তাঁর পরিবারের সদস্য এবং কয়েকজন সিনিয়র সরকারি কর্মকর্তাকে সঙ্গে নিয়ে বঙ্গভবনের দরবার হলে পবিত্র ঈদুল আজহা’র নামাজ আদায় করেছেন।
অদৃশ্য শত্রু মহামারি কভিড-১৯ এর কারণে এবারও হাইকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহে ঈদের জামাত অনুষ্টিত হয়নি। শত বছরের ঐতিহ্য ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ময়দানেও ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়নি। তবে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ঈদের ৫টি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদের প্রধান জামাত এবার বায়তুল মোকাররম মসজিদেই অনুষ্ঠিত হয়েছে।
করোনা মোকাবিলায় ও সংক্রমণ বিস্তার রোধকল্পে সরকারের নির্দেশনায় এবার খোলা মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়নি। সারাদেশের ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয় মসজিদের ভেতরে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে।
আজ সকাল ৭টায় ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে। এতে ইমামতি করেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মাওলানা মো. মিজানুর রহমান। মুকাব্বির হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বায়তুল মুকাররম মসজিদের মুয়াজ্জিন মো. আতাউর রহমান।
এর পর পর্যায়ক্রমে সকাল ৮টা, ৯টা, ১০টা এবং ১০টা ৪৫ মিনিটে অনুষ্ঠিত হয় শেষ ঈদ জামাত।
দ্বিতীয় জামাত সকাল ৮টায় অনুষ্ঠিত হয়। এ জামাতের ইমামতি করেন বায়তুল মোকাররমের পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মুহিব্বুল্লাহিল বাকী নদভী। মুকাব্বির ছিলেন হাফেজ ক্বারী কাজী মাসুদুর রহমান।
তৃতীয় জামাত সকাল ৯টায় অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন বায়তুল মোকাররমের পেশ ইমাম মাওলানা এহসানুল হক। মুকাব্বির ছিলেন হাফেজ ক্বারী হাবিবুর রহমান মেশকাত।
চতুর্থ জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল ১০টায়। এ জামাতের ইমামতি করেন বায়তুল মোকাররমের পেশ ইমাম মাওলানা মহিউদ্দিন কাসেম। মুকাব্বির ছিলেন ক্বারী মো. ইসহাক।
পঞ্চম ও সর্বশেষ জামাত সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুহাদ্দিস হাফেজ মাওলানা ওয়ালিয়ূর রহমান খান। মুকাব্বির ছিলেন মো. শহীদুল্লাহ।
নামাজ শেষে খুতবা পাঠ করা হয়। এরপর অনুষ্ঠিত হয় দোয়া ও মোনাজাত। তবে করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে নির্দেশনা মেনে নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখেন মুসল্লিরা।
নামাজ শেষে মোনাজাতে দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনা করা হয়। পাশাপাশি বৈশ্বিক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও নিহতদের জন্য দোয়া করা হয়েছে। করোনা থেকে মুক্তির জন্য মুসল্লিরা আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করেন।
তবে ঈদের নামাজ শেষে চির পরিচিত দৃশ্য মুসল্লিদের হাত মেলানো ও কোলাকুলির দৃশ্য এবার চোখে পড়েনি। করোনার সংক্রমণ রোধকল্পে সরকারের স্বাস্থ্যবিধি মেনে এ থেকে বিরত থাকেন মুসল্লিরা।
করোনা মোকাবিলায় ও সংক্রমণ বিস্তার রোধকল্পে ঈদুল ফিতরের মতো এই ঈদে ও এবার হাইকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহে ঈদের প্রধান জামাত হয়নি। তবে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে এবার ঈদের ৫টি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিটি জামাতেই মাস্ক পরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদের নামাজ আদায় করেন মুসল্লিরা। মুসল্লিদের উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি ছিল প্রথম ও প্রধান জামাতে।
প্রথম ও প্রধান জামাতে অংশ নিতে রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সকাল সাড়ে ৬টার আগেই মুসল্লিরা ছুটে আসেন বায়তুল মোকাররম প্রাঙ্গণে। মুসল্লিদের উপস্থিতিতে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় বায়তুল মোকাররম মসজিদের ভেতর। এরপর একে একে অনুষ্ঠিত হয় বাকি চারটি জামাত। তবে প্রথম জামাতে মুসল্লিদের যেমন উপস্থিতি ছিল, পরে চারটি জামাতে উপস্থিতির হার ছিল তার থেকে কম।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, ধর্ম মন্ত্রণালয় ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী মোর্শেদ হোসেন কামাল, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সচিব আকরামুজ্জামান ঈদের প্রথম জামাতে নামাজ
আদায় করেন।
প্রত্যেকটি জামাতেই দক্ষিণ গেট দিয়ে মুসল্লিদের সারি ধরে আর্চওয়ে দিয়ে মসজিদে প্রবেশ করতে দেখা গেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ মসজিদুল জামিআয় পবিত্র ঈদুল আযহা’র জামাত সকাল ৮টায় অনুষ্ঠিত হয়। জামাতে ইমামতি করেন মসজিদের সিনিয়র ইমাম খতিব ড. সৈয়দ মুহাম্মদ এমদাদ উদ্দীন। বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল জামে মসজিদে সকাল ৮টায় ঈদুল আজহার জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া একই সময়ে ফজলুল হক মুসলিম হল মসজিদে ঈদের জামাত হয়। করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবং সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে ঈদের এসব জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যদিয়ে রাজধানীসহ সারাদেশে মুসলিম সম্প্রদায় ঈদুল আজহা উদযাপন করছে। মহান আল্লাহর অপার অনুগ্রহ লাভের আশায় ঈদুল আজহার জামাত শেষে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা সামর্থ অনুয়ায়ি পশু কোরবানি করছেন।
সারাদেশে বিভাগ, জেলা, উপজেলা, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ এবং সরকারি সংস্থাসমূহের প্রধানগণ জাতীয় কর্মসূচীর আলোকে নিজ নিজ কর্মসূচি প্রণয়ন করে ঈদ উদযাপন করছেন।
এদিকে রাজধানীর রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ মসজিদে ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করেছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ। সকাল ৮টায় রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ মসজিদে পবিত্র ঈদুল আজহা’র প্রথম জামাতে অংশ নেন তিনি। এবার রাজারবাগে সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করে নামাজ আদায়ের লক্ষ্যে মোট ৩টি জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
এছাড়া ঐতিহ্যবাহী সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলিয়া, ঢাকার মসজিদ এবং ধানমন্ডি ঈদগাহ মসজিদে সকাল ৮টায় ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
লক্ষ্মীবাজার নূরানী জামে মসজিদে সকাল ৮টায়, লক্ষ্মী বাজার মিয়া সাহেব ময়দান খানকা শরীফ জামে মসজিদে সকাল ৭ টায়, লালবাগ জে এন সাহা রোডস্থ বায়তুস সালাম জামে মসজিদে সকাল সাড়ে ৭ টায় প্রথম ঈদ জামাত। এখানে সকাল সাড়ে ৮ টায় দ্বিতীয় ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়। লালবাগ গফুর মসজিদে প্রথম জামাত সকাল সোয়া ৮টায় ও দ্বিতীয় জামাত সকাল ৯টায় অনুষ্ঠিত হয়।
কারওয়ান বাজার আম্বর শাহ জামে মসজিদে সকাল সাড়ে সাতটায়, নগরীর চকবাজার ইসলামবাগ বড় মসজিদে সকাল ৭ টায়, সকাল ৮ টায় ও সকাল ৯ টায় আরো দু’টি ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
সেগুন বাগিচাস্থ মসজিদে নূর-এ সকাল সাড়ে ৭ টায়, ঢাকার কামরাঙ্গীরচর জামিয়া নুরিয়া মসজিদে সকাল ৭ সাড়ে সাতটায়, কামরাঙ্গীরচর রহমতিয়া জামে মসজিদে সকাল ৭টায়, আকসা হুজুরপাড়া কামরাঙ্গীরচর মসজিদে সকাল ৭ টায়, ঢাকার ডেমরার ঐতিহ্যবাহী দারুন নাজাত সিদ্দিকীয়া মাদরাসা জামে মসজিদে সকাল ৭টায় এবং ডেমরার বড় ভাঙ্গাস্থ আল আকসা জামে মসজিদে সকাল সাড়ে ৭টায় ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
এছাড়া মহাখালীর মসজিদে গাউসুল আজমে ৩টি ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানা গেছে।