• ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৯শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় দলের তারকা নিজের ঘরে বহিস্কৃত!

Daily Jugabheri
প্রকাশিত আগস্ট ৫, ২০২১
জাতীয় দলের তারকা নিজের ঘরে বহিস্কৃত!

যুগভেরী রিপোর্ট 
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ফরমেটে প্রথম জয়ের পর প্রশংসায় ভাসছেন বাংলাদেশের তরুণ ক্রিকেটার নাসুম আহমেদ। নাসুম আহমেদই প্রথম ক্রিকেটার, যিনি জাতীয় দলে খেলছেন সুনামগঞ্জ জেলা থেকে। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া বধের নায়ক নাসুম সুনামগঞ্জ ক্রিকেট লিগে আজীবন বহিষ্কৃত।
নাসুম আহমদের বাড়ি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার হাওরঘেরা দুর্গম জনপদ মধুরাপুরে। তার বাবা আক্কাস আলী একজন কৃষক। তারা বর্তমানে সপরিবারে সিলেট বসবাস করছেন।
জানা যায়, সুনামগঞ্জের প্যারামাউন্ট ক্রিকেট ক্লাবে ব্যাটসম্যান হিসেবে একযুগ আগে অভিষেক হয় নাসুম আহমদের। তবে ২০১৫ সালে ক্রিকেট লিগে জেলার পক্ষে না খেলে বিভাগীয় সিলেট দলে খেলায় তাকে আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ করে সুনামগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থা।
সুনামগঞ্জ প্যারামাউন্ট ক্রিকেট ক্লাবের সভাপতি উজ্জ্বল বখত এ ব্যাপারে বলেন, নাসুম আমার মাধ্যমেই প্যারামাউন্ট ক্রিকেট ক্লাবে আসে এবং সুনামগঞ্জ জেলায় ক্রিকেট চর্চা শুরু করে নাসুম। সময়টা ছিল যতটুকু মনে পড়ে ২০০৯ কি ১০ হবে সে কিশোর বয়সে। ক্রিকেট খেলায় তার একটি আলাদা টান ছিল, ২০১৪ সাল পর্যন্ত আমাদের ক্লাবে নিয়মিত খেলে। পরে সে বয়সভিত্তিক সিলেট জেলা দলের হয়ে খেলেন।
প্যারামাউন্ট ক্রিকেট ক্লাবের কর্মকর্তা ওয়াসিম বখত বলেন, নামুসকে আমরা বিভিন্ন ক্লাবে খেলার সুযোগ দিয়েছিলাম তাই সে সিলেট গিয়ে বিভিন্ন ক্রিকেট ক্লাবে খেলেছে, কিন্তু জেলা ভিত্তিক খেলায় আমাদের এখানে শর্ত আছে যে যে জেলার খেলোয়াড় সে নিজের জেলার হয়ে খেলবে সেই সুবাধে নাসুমকেও আমরা জেলা ভিত্তিক দলে ডাকলে সে সুনামগঞ্জের হয়ে খেলতে চাইনি, পরবর্তীতে তাকে চিঠি দেওয়া হলে সেটারও উত্তর সে দেয়নি এবং আমাদের কারও সাথে যোগাযোগ করেনি, পরবর্তী জেলা ক্রীড়া এসব বিষয়ে জানতে পারলে তাকে বহিষ্কার করে এবং পরবর্তী চিঠির কোন জবাব না দেওয়ায় তাকে আজীবন বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, ২০২০ সালে ফেব্রুয়ারির দিকে আমাদের লীগ খেলার জন্য নাসুম সুনামগঞ্জে আসলেও তার নিষেধাজ্ঞা থাকায় সে খেলতে পারেনি। আমি চাইবো তার বহিষ্কার আদেশ তুলে দিতে কারণ সে এখন সুনামগঞ্জে ছেলে হয়ে জাতীয় দলে খেলেছে, তার কাছ থেকে নতুন খেলোয়াড়রা অনেক কিছুই শিখতে পারবে তাই চাইবো এসব তুলে দেওয়া হোক।
প্যারামাউন্ট ক্রিকেট ক্লাবের সাবেক ক্যাপ্টেন ও সাবেক সুনামগঞ্জ পৌরসভার প্যানেল মেয়র হোসেন আহমদ রাসেল বলেন, নাসুম অনেক ভালো খেলোয়াড় ছিল, সে সবসময় বিভিন্ন জাতীয় বা অন্যান্য দেশের খেলোয়াড়দের খেলা দেখতো এবং আয়ত্তে আনার চেষ্টা করতো, বা হাতে ধুন্ধুমার ব্যাটিং করতো। সঙ্গে অফ স্পিন ছিল বাড়তি যোগ্যতা। কিন্তু এক পর্যায়ে তার ব্যাটিং লাইন চাপা পড়ে বোলিংয়ের কারণে। তবে আমি চাইবো তাকে যদি ব্যাটিংয়ে দেওয়া হয় তাহলে সে হয়তো আরও ভালো কিছু করতে পারবে, কারণ আমাদের এখানে সে বাঁহাতি ব্যাটসম্যান হিসেবেই পরিচিত ছিল।
সুনামগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার ক্রিকেট বিভাগের যুগ্ম সম্পাদক চৌধুরী আহমদ মুজতবা রাজি বলেন, নাসুম আহমদ সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলার মধুরাপুর গ্রামের বাসিন্দা। ছোটবেলা কেটেছে সিলেট শহরে। অনূর্ধ্ব ১৪, ১৬ ও ১৮ প্রতিযোগিতায় সিলেট জেলা দলের পক্ষে অংশ নেয়। জাতীয় চ্যাস্পিয়নশীপেও সিলেট জেলা দলের পক্ষে অংশ নেয়। ২০১৩ সালে সুনামগঞ্জ ১ম বিভাগ ক্রিকেট লীগে প্যারামাউন্ট ক্রিকেট ক্লাবের পক্ষে অংশগ্রহণ করে। এ বছরই জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে সুনামগঞ্জ জেলা দলে তাকে ডাকা হয়। কিন্তু সে কোন সাড়া দেয়নি এবং সিলেট জেলা দলের পক্ষে অংশ নেয়। পরবর্তীতে জেলা ক্রীড়া সংস্থার ক্রিকেট বিভাগের সম্পাদক স্বাক্ষরিত পত্রে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয়। কিন্তু সে তার কোন জবাব না দিলে তাকে সুনামগঞ্জের লীগে আজীবন বহিষ্কার করা হয়। পরবর্তীতে ২০১৯-২০ সালের ক্রিকেট লীগে সে প্যারামাউন্ট ক্লাবের পক্ষে অংশ নিতে আসলে নিষেধাজ্ঞাদেশের কারণে তাকে খেলতে দেয়া হয়নি। সে এ বিষয়ে কখনোই জেলা ক্রীড়া সংস্থায় কোন আবেদনও করেনি।
তিনি আরও বলেন, সে যদি আবেদন করে অবশ্যই আমরা তা বিবেচনা করবো। জেলা ক্রীড়া সংস্থার ১ম বিভাগ ক্রিকেট লীগের অনুবিধিমালায় স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে কোন খেলোয়াড় লীগে অংশগ্রহণ করলে অবশ্যই জেলা ক্রিকেট দলের পক্ষে অংশগ্রহণ করতে বাধ্য থাকবে। নাসুম আজ সুনামগঞ্জ সিলেট পেরিয়ে পুরো দেশবাসীর মুখ উজ্জ্বল করেছে। আমি তার সাফল্যে গর্বিত। সে আরও সামনে এগিয়ে যাক, দীর্ঘদিন সার্ভিস দিক বাংলাদেশ দলকে। তার সার্বিক মঙ্গল কামনা করি।
প্যারামাউন্ট ক্রিকেট ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এনাম আহমদ বলেন, আমার তাকে বেশি সুযোগ সুবিধা দিতে পারিনি। জেলা ক্রিকেট কমিটিও তাকে তেমন সুযোগ সুবিধা দিতে পারেনি। যার কারণে জাতীয় ক্রিকেট লীগ শুরু হলে সে আমাদের জানায় সুনামগঞ্জ জেলা টিমে সুযোগ সুবিধা কম। তাই সিলেট দলের হয়ে খেলবে। ক্রিকেট নিয়ে তার স্বপ্নের লক্ষ্যে পৌছার জন্য সে সিলেট জেলার হয়ে খেলে। যার এই ছোট কারণে সুনামগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থা আজীবনের জন্য যখন তাকে নিষিদ্ধ করে। সেই সময় এবং সেই বৈঠকে আমি নিজে দাড়িয়ে প্রতিবাদ করেছিলাম। আমরা অবিলম্বে তার নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে লজ্জা থেকে মুক্তির দাবি জানাই।
সুনামগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান ইমদাদ রেজা চৌধুরী বলেন, জেলা ক্রিকেট সংস্থার ক্রিকেট কমিটি জেলা পর্যায়ে জাতীয় লিগ শুরু হলে তাকে জেলা দলে খেলানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল কিন্তু বেশি সুযোগ সুবিধা পেয়ে সে সুনামগঞ্জের হয়ে না খেলে সিলেট জেলার হয়ে খেলা শুরু করে। এ কারণে তাকে ওই কমিটি তাকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়। ২০২০ সালে আবারও ক্রিকেট খেলতে সুনামগঞ্জে আসে তখন এই কারণে তাকে খেলতে দেওয়া হয়নি। তবে আগামী মিটিংয়ে আমরা বৈঠক করে তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেব এবং তাকে আবারও সুনামগঞ্জে মাঠে খেলার সুযোগ করে দেওয়া হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন