যুগভেরী ডেস্ক
গোলাপগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আমিনুল ইসলাম রাবেল । ছিলেন পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি । দলীয় নির্দেশনা অমান্য করে গত পৌরসভা নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হন। পরে তাঁকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করে দলের হাইকমান্ড।
তবে এবার ক্ষোভ থেকে হোক, অথবা ‘কোনো পরিকল্পনার’ অংশ হিসেবে হোক- আওয়ামী লীগ, দলের শীর্ষ নেতা, সর্বোপরি পুরো বাংলাদেশ নিয়ে বিদেশের মাটিতে বসে তীর্যক মন্তব্য করেছেন পৌর মেয়র রাবেল।
জানা গেছে, বর্তমানে যুক্তরাজ্য সফরে রয়েছেন রাবেল। গত বুধবার রাতে লন্ডনে গ্রেটার সিলেট ডেলেপমেন্ট কাউন্সিল আয়োজিত মতবিনিময় সভায় বিস্ফোরক মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, “বাংলাদেশে যে ইলেকশনগুলো হচ্ছে, সেখানে আমি নৌকার বিরুদ্ধে দু’বারই পাস করেছি। আমি একবার মেয়র ছিলাম বলে মানুষের আস্থা অর্জন করেছি। পরের বার মানুষ আমাকে ভোট দিয়েছে। আপনারা জানেন, নির্বাচনে যে দলীয় প্রতীক পাবেন তাকে পাস করাতেই হবে। এর মাঝেও গোলাপগঞ্জ পৌরসভায় নৌকা, ধানের শীষ থেকে ৫-৭ গুণ বেশি ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছি। একজন প্রবাসী হিসেবে মানুষ আমাকে ভোট দিয়েছে। আমি প্রবাসীদের মুখ উজ্জ্বল রাখতে কাজ করছি।”
তিনি বলেন, “ওবায়দুল কাদের সাহেবকে গিয়ে বলেছিলাম, আমি একজন প্রবাসী, নির্বাচন করবো। কিন্তু তিনি দেননি। ‘প্রবাসে যাও’ বলে দিয়েছিলেন। আমি তখন চ্যালেঞ্জ করে উনাকে বলেছিলাম, আপনারা যে প্রার্থীই দেন; আমি পাস করবো। আপনার বাংলাদেশি প্রার্থী পাস করাতে পারবেন না। এরপর তিনি আমাকে মনোনয়ন দেননি। আসলে আমাদের বাংলাদেশের মানুষের চরিত্র এখনো ঠিক হয়নি।”
গোলাপগঞ্জের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বিষয়ে মেয়র রাবেল বলেন, “গোলাপগঞ্জ পৌরসভায় আমি এখন পর্যন্ত ১০০ কোটি টাকার কাজ করেছি। গোলাপগঞ্জ পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডকে আমি সাজিয়েছি। লাইটিং করেছি। আরিফ ভাই (সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী) যেভাবে টাউনকে উন্নত করেছেন, আমি সেভাবে গোলাপগঞ্জের উন্নয়ন করেছি। আমরা প্রবাসী থাকায় বাংলাদেশের মতো মন-মানসিকতার নয়। এ কারণে কাজ করতে পেরেছি।”
তিনি বলেন, “দেশ খুব সুন্দর এগিয়ে যাচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশ আরও উন্নত হোক- এটা আমরা আশা করি। একজন ভালো মানুষ গোটা দেশকে ভালো করবে সেটি সম্ভব নয়। দেশে এখনো প্রচুর পরিমাণ দুর্নীতি হচ্ছে। আমরা যারা জনপ্রতিনিধি, আমরা তো গিয়ে ফান্ডিং আনি। আমরা মন্ত্রণালয়ে যাই। সচিবালয়ে সচিবদের সঙ্গে মিটিং করি, এলজিইডি মিনিস্টারের সঙ্গে মিটিং করি। তাদের কাছ থেকেই আমাদের ফান্ড আনতে হয়। ওখানে বিরাট একটা পার্সেন্টিজ দিয়ে আনতে হয়। আপনি ১০০ কোটি টাকার ফান্ড নিয়ে আসলেন। সেখানে ৫ পার্সেন্ট আগেই দিয়ে আসতে হয়। এটাই হচ্ছে বাস্তব দিক।”
যুক্তরাজ্যে সফরে থাকা রাবেলের এমন বক্তব্যে সিলেটজুড়ে চলছে তোলপাড়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়।
জানা গেছে, আমিনুল ইসলাম রাবেল যুক্তরাজ্যের লন্ডনে যুবলীগের রাজনীতি করতেন। দেশে ফিরে তিনি গোলপগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি হন। তিনি আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে গোলাপগঞ্জে পৌর উপ-নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন। তবে দল তাকে মনোনয়ন দেয়নি। পরে স্বতন্ত্র থেকে প্রার্থী হয়ে তিনি বিজয়ী হন। একইভাবে গেল বছর এই গোলাপগঞ্জ পৌর নির্বাচনেও তিনি স্বতন্ত্র থেকে মেয়র নির্বাচিত হন। নির্বাচনে বিদ্রোহী হওয়ায় দল থেকে বহিষ্কার হয়ে পদও হারান তিনি।
এদিকে, গোলাপগঞ্জের মেয়রের এমন বিস্ফোরক মন্তব্যে ক্ষোভে ফুঁসছেন পৌর আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সমালোচনার তিরে বিদ্ধ করছেন রাবেলকে।
এ বিষয়ে গোলাপগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত রাবেলের প্রতিদ্বন্দ্বী মেয়র প্রার্থী মো. রুহেল আহমদ বলেন, ‘আমার মনে হচ্ছে এটি একটি গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ। দেশবিরোধী কোনো চক্রকে খুশি করতে গিয়ে তিনি এমন বক্তব্য দিয়েছেন। কারণ- তিনি যে প্রোগ্রামে এমন ডাহা মিথ্যা ও শিষ্টাচার বহির্ভূত বক্তব্য দিয়েছেন সে প্রোগ্রামে অতিথি ছিলেন একাত্তরের চেতনাবিরোধী লোকেরা।
রুহেল বলেন, তাছাড়া তিনি যে গোলাপগঞ্জ পৌরসভায় ১০০ কোটি টাকার উন্নয়নের কথা বলেছে তা ডাহা মিথ্যা। ১০০ কোটি টাকার উন্নয়ন হলে গোলাপগঞ্জ অন্যরকম হয়ে যেতো। আমি দুদকের কাছে দাবি জানাচ্ছি- এই ১০০ কোটি টাকা কোথায় খরচ করা হয়েছে সে হিসাব চাওয়া হোক রাবেলের কাছে।
এক প্রশ্নের জবাবে রুহেল বলেন, তিনি ক্ষোভ থেকেও এমনটি বলতে পারেন। কারণ- তিনি দীর্ঘদিন দল থেকে বহিষ্কৃত। এ নিয়েও তার ভেতরে ক্ষোভ বিরাজ করতে পারে। আর আমি জনপ্রতিনিধি না হলেও জানামতে- মন্ত্রী ও সচিবদের পার্সেন্টেজ দিয়ে বরাদ্দ আনতে হয় কথাটি সঠিক নয়।
গোলাপগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক জাকারিয়া আহমদ পাপলু বলেন, রাবেল ১০০ কোটি টাকার দুর্নীতি করেছেন। সেই দুর্নীতি ঢাকতে গিয়ে এখন উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপাচ্ছেন তিনি। তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে ১০০ কোটি টাকা কোথায় গেলো সেটি বের করা হোক।
তিনি বলেন, আমি দীর্ঘ ১৫ বছর গোলাপগঞ্জের মেয়র ছিলাম। কিন্তু কোনোদিন মন্ত্রী-এমপি ও সচিবদের পার্সেন্টেজ দিয়ে বরাদ্দ আনতে হয়নি। এটি একটি জঘন্য মিথ্যাচার। নিজের দুর্নীতি ঢাকতেই রাবেল এমন বলছেন।
পাপলু বলেন, ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দের কাজ তিনি কোথায় করিয়েছেন? বাস্তবে তো তা দৃশ্যমান নেই! আমি মেয়র থাকাকালে যে লাইটিং করে এসেছিলাম সেভাবেই পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে লাইটিং রয়েছে।