• ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৯শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

অমিক্রন বাড়ছেই

Daily Jugabheri
প্রকাশিত ডিসেম্বর ৬, ২০২১
অমিক্রন বাড়ছেই

যুগভেরী ডেস্ক
দেশে দেশে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন অমিক্রনে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডবি¬উএইচও) প্রধান বিজ্ঞানী সৌম্য স্বামীনাথান বলেছেন, দক্ষিণ আফ্রিকায় অমিক্রন শনাক্ত হওয়ার পর দেশটিতে প্রতিদিনই রোগী দ্বিগুণ হচ্ছে। এই অঞ্চলেই প্রথম অমিক্রন শনাক্ত হয়েছে। গত চার দিনে দেশটিতে রোগী শনাক্ত চার গুণ বেড়েছে।
এদিকে যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন, করোনাভাইরাসের নতুন স্ট্রেন অমিক্রনে আক্রান্তের সংখ্যা সে দেশে ১০৪-এ পৌঁছেছে। অমিক্রন শনাক্ত হওয়ার পর গত দুই দিনে দেশটিতে সর্বশেষ অমিক্রন সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা তিন গুণ বেড়েছে।
অমিক্রন নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ডবি¬উএইচওর প্রধান বিজ্ঞানী। গত শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘করোনার নতুন ধরন নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে আমাদের সব সময় প্রস্তুত এবং সতর্ক থাকতে হবে। কারণ, গত বছরের চেয়ে আমাদের পরিস্থিতি ভিন্ন।’
আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, সৌম্য স্বামীনাথান বলেন, অমিক্রন ধরনে করোনার টিকা কাজ করবে কি না, সেটি নিয়ে কথা বলার মতো সময় এখনো আসেনি।
ডবি¬উএইচও জানিয়েছে, অমিক্রন ধরনের সংক্রমণে এখনো কোনো মৃত্যু র কথা তারা জানতে পারেনি। তবে নতুন এই ধরন বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ায় সব দেশকে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছে।
এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ডবি¬উএইচওর তথ্যমতে, মাত্র দুই দিনে ২৩ দেশ থেকে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন অমিক্রন ৩৮টি দেশে শনাক্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
সর্বশেষ যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ায় স্থানীয়ভাবে অমিক্রনে সংক্রমিত রোগী শনাক্ত হয়েছে। অমিক্রনের প্রকোপে দক্ষিণ আফ্রিকায় মোট আক্রান্ত ৩০ লাখ ছাড়িয়েছে।
এরপর ভারতে অমিক্রনে আক্রান্ত তৃতীয় ব্যক্তি শনাক্তের খবর পাওয়া গেছে স্থানীয় সময় গতকাল শনিবার। দেশটির সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশটিতে করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে ৩ কোটির কাছাকাছি। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৪১৫ জনের। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, গুজরাটের কর্মকর্তারা জানান, অমিক্রন শনাক্ত হওয়া তৃতীয় ব্যক্তির বয়স ৭২ বছর। তিনি ভারতীয় বংশোদ্ভূত। কয়েক দশক ধরে জিম্বাবুয়েতে থাকছেন। গত ২৮ নভেম্বর তিনি ভারতে আসেন।
ডবি¬ওএইচও বলছে, ইউরোপে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা সাড়ে ৭ কোটি ছাড়িয়েছে। অমিক্রন ছড়িয়ে পড়ার পর নরওয়ের রাজধানী অসলোর একটি ক্রিসমাস পার্টিতে অন্তত ১৩ জনের শরীরে নতুন ধরন শনাক্ত হয়েছে। বলা হচ্ছে, দক্ষিণ আফ্রিকার বাইরে এটাই সবচেয়ে বড় গুচ্ছ সংক্রমণ। সংস্থাটি বলছে, আগামী কয়েক মাসে ইউরোপে মোট কোভিড সংক্রমণের অর্ধেকই হতে পারে অমিক্রনের কারণে।
এদিকে ডবি¬উএইচওর আরেক পরিচালক মাইক রায়ান বলেন, অমিক্রনের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য প্রচলিত করোনার টিকা পরিবর্তন করতে হবে—এমন কোনো প্রমাণ এখন পর্যন্ত নেই। বর্তমানে বাজারে থাকা টিকার মাধ্যমে আরও বেশি লোককে টিকা প্রয়োগের দিকে কর্তৃপক্ষকে নজর দিতে হবে। তিনি আরও বলেন, ‘এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকা লোকদের টিকা দেওয়ার দিকে জোর দিতে হবে আমাদের।’
যুক্তরাষ্ট্রের ফাইজার ও জার্মানির বায়োএনটেক যৌথভাবে করোনার টিকা উৎপাদন করছে। নতুন ধরন নিয়ে বায়োএনটেকের সিইও উগুর সাহিন বলেন, চাহিদা অনুযায়ী নতুন ধরনের উপযোগী টিকাও তুলনামূলক দ্রুততম সময়ের মধ্যে আসা সম্ভব।
ইতিমধ্যে অস্ট্রেলিয়ায় করোনার নতুন ধরনের কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। অর্থাৎ সেখানে আক্রান্ত ব্যক্তি বিদেশেও ভ্রমণ করেননি এবং আক্রান্ত কারও সংস্পর্শেও আসেননি। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ছয়টি অঙ্গরাজ্যে এ ধরনের সংক্রমণ ছড়িয়েছে। আফ্রিকার দেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতিবেশী জিম্বাবুয়ে বলেছে, তারা ৫০ জনের শরীরে অমিক্রন শনাক্ত করেছে।
অমিক্রন নিয়ে প্রাথমিক একটি গবেষণা প্রকাশ করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার বিজ্ঞানীরা। সেখানে দেখা গেছে, ডেলটা ও বেটা ধরনের তুলনায় অমিক্রনের পুনরায় সংক্রমিত করার ক্ষমতা তিন গুণ বেশি। এ ছাড়া আগে করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে গড়ে ওঠা প্রতিরোধব্যবস্থা ভেঙে দেওয়ার সক্ষমতা অমিক্রনের রয়েছে।
আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা রেডক্রস অমিক্রন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার জন্য করোনার টিকা প্রদানে সমন্বয়হীনতাকে দায়ী করেছে। সংস্থাটির প্রধান ফ্রান্সেসকা রোকা বলছেন, বিশ্বব্যাপী টিকাদানের হারে বৈষম্যের কারণে কত বড় বিপদ আসতে পারে, অমিক্রনের সংক্রমণ তার প্রমাণ।
দক্ষিণ আফ্রিকায় শিশুদের মধ্যে অমিক্রনের সংক্রমণ বাড়ছে। দেশটির চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, অমিক্রন শনাক্ত হওয়ার পর থেকে দেশটিতে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাসপাতালে ভর্তির হার ঊর্ধ্বমুখী। তবে তাঁরা বলছেন, কম বয়সীদের ক্ষেত্রে যে ঝুঁকি বেশি, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।

সংবাদটি শেয়ার করুন