প্যাথলজিষ্ট ছাড়া চলছে ডায়গনষ্ট্রিক সেন্টার, হুমকীর মুখে স্বাস্থ্য সেবা
মোঃ আব্দুল হালিম, জৈন্তাপুর ::: জৈন্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বেহাল দশা, জরুরী বিভাগে রোগী দেখছেন ব্রাদার’রা। একটি ডায়গনষ্টিক সেন্টার চলছে প্যাথলজিষ্ট ছাড়া। বহিঃবিভাগে রোগী দেখতে অবহেলা আর প্রাইভেট চেম্বারে চলে আন্তরিক সেবা। এ্যাম্বুলেন্স চলে আউটসোর্সিং’র চালক দিয়ে। গাড়িটি যে কোন সময় বিকল হওয়ার আশংকা রয়েছে। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় হাসপাতালের স্বাস্থ্য সেবা চরমভাবে ব্যাহত।
সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলায় ঘোষিত ৫০ শয্যার হাসপাতল এখনো চলছে ৩১ শয্যায়। প্রায় লক্ষাধিক মানুষের সেবা গ্রহনের এই প্রতিষ্ঠান চলছে অনেকটা জোড়াতালি দিয়ে। অথচ জৈন্তাপুর উপজেলা ছাড়াও পার্শবর্তী কানাইঘাট এবং গোয়াইনঘাট উপজেলার অসংখ্য রোগী সেবা নিতে আসেন এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। ৪ জন মেডিকেল অফিসার থাকা সত্তেও বঃিবিভাগে রোগী দেখেন ১/২ জন করে। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত বঃিবিভাগে অবস্থান করার কথা থাকলেও সকাল ১১ থেকে ১২টা পর্যন্ত দীর্ঘ লাইনে দাড়িয়ে থাকতে দেখা যায় রোগী সাধারণকে, ডাক্তারগণের খবর মিলে না। আবার ১২টার পরে এসে তড়িগড়ি করে কিছু রোগী দেখা হলো এবং প্রায় সবাইকে বিভিন্ন পরীক্ষায় পাঠানো হলো। রোগীরা পরীক্ষার রিপোর্ট নিয়ে আসার পর ডাক্তার চলে যাচ্ছেন প্রশ্ন করলে বলছেন ২টার পরে চেম্বারে চলে আসেন। এতে ডাক্তারগণের সেবার পরিবর্তে বাণিজ্যিক মানসিকতাই প্রতিফলিত হচ্ছে। কারন তারা স্বল্প সময়ের জন্য বহিঃবিভাগে বসেন রোগী সংগ্রহ করার জন্য আর এই রোগীরাই তাদের চেম্বারের পুজি। বহিঃবিভাগে করোনা ভাইরাসের দুহাই দিয়ে দূরত্ব বজায় রেখে রোগী দেখা হয়। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্লিপে যে চিকিৎসা দেওয়া হয় তা অত্যন্ত নি¤œমানের যেনো রোগীর রোগের কোন পরিবর্তন না হয়। পরবর্তীতে ডাক্তারের চেম্বারে গেলে অবশ্যই মানসম্মত চিকিৎসা প্রদান করা হয়। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পর্যাপ্ত পরিমানে ঔষধ সরবরাহ হলেও গরীব-অসহায় রোগীরা সরকারী ঔষধ না পাওয়ার অভিযোগ নিত্যদিনের ঘটনা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী প্রশ্ন করে বলেন সরকারী ঔষধ জনগন পায় না তা হলে ঔষধগুলো যায় কোথায়, তা হলে কি সব ঔষদ ডাক্তার-কর্মচারীরা খেয়ে ফেলে। অনেক সময় ষ্টোর’র ঔষধ মেযাদ উত্তীর্ণ হওয়া পর পুড়িয়ে ফেলা হয়। অথচ বহিঃবিভাগে রোগীদের মাঝে ঔষধ বিতরণ না করায সরকারী এই সম্পদ মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে থাকে। র্যাংকিন প্যাথলজি এন্ড এক্স-রে সেন্টারে নেই কোন প্যাথলজিষ্ট। অথচ জৈন্তাপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সকল ডাক্তার’রা রোগী পাঠাচ্ছেন পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য। এনিয়ে বেশ কয়েকটি দূর্ঘটনাও ঘটেছে।
একটি সূত্রে জানা যায়, কোন ডাক্তার ছাড়াই জরুরী বিভাগে রোগীর চিকিৎসা প্রদান করা হয়ে থাকে। জরুরী বিভাগে একজন মেডিকেল অফিসার ও একজন উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার সার্বক্ষনিক থাকার কথা। কিন্তু মেডিকেল অফিসার কে কখনোই পাওয়া যায় না। তিনি জরুরী বিভাগের মোবাইল নিয়ে নিজের চেম্বারে অবস্থান করেন। জরুরী বিভাগ চলে ২ জন সিনিয়র স্টাফ নার্স (ব্রাদার) আর ১জন এক্স-রে টেকনিশিয়ানের মাধ্যমে। জৈন্তাপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার মাত্র একজন। তিনি ছাড়া বাকি ব্রাদার আব্দুল মালেক ও লোকমান আহমদ জরুরী বিভাগে রোগীর চিকিৎসা পত্র লিখেন কি করে এমন প্রশ্ন সর্ব মহলে। তাছাড়া রীতিমত জরুরী বিভাগে রোগীর চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন এক্স-রে টেকনিশিয়ান আব্দুস সাত্তার। ১জন নিরাপত্তা প্রহরী ওয়ার্ড বয় সেজে রোগীর সেলাই ও ড্রেসিংয়ের কাজ করে থাকে, মাঝে মধ্যে ঝাড়–দারকেও রোগীর ড্রেসিং করতে দেখা যায়। মাঝে মধ্যে জরুরী বিভাগের স্টাফ ছাড়াও অপরিচিত লোকজনকে কাজ করতে দেখা যায়। সম্প্রতি জাফলংয়ের ১জন ব্যাক্তি জরুরী বিভাগে বসে খাতা এন্ট্রি করতে দেখা গেছে, পরিচয় জানতে চাইলে বলা হয় তিনি হাসপাতালের কাজে অজ্ঞিতার প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। কিন্তু জৈন্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কাউকে অভিজ্ঞতার প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে এটা প্রথম শোনা গেলো। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডিসপেন্সারীতে নেই কোন ফার্মাশিষ্ট, এর ফলে অফিস সহকারী, ব্রাদার, নাইটগার্ড, ঝাড়–দার, আবার কখনো এমএলএসএস দিয়ে রোগীকে ঔষধ প্রদান করা হচ্ছে। এরকম অদক্ষ লোকবল দিয়ে চলছে ডিসপেন্সারী যাদের নিয়মনীতি ছাড়াও ঔষধ পত্রের উপর নূন্যতম কোন ধারণাও নেই। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন সিনিয়র স্টফ নার্স (ব্রাদার) নিজেকে ডাক্তার পরিচয় দিয়ে পপুলার ডায়গনষ্ট্রিক সেন্টারে নিয়মিত রোগী দেখেন।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এ্যাম্বুলেন্স চালক শাহিন আহমদ রাতে নিজের বাড়ীতে চলে যান, গুরুতর রোগী সিলেট যেতে চাইলে জরুরী বিভাগ থেকে বলা হয় এ্যাম্বুলেন্স বিকল অথবা চালক অসুস্থ্য। কিছুদিন পূর্বে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কয়েকজন ক্ষমতাশীল কর্মচারী সরকারী চালক মামুনুর রশিদকে পরিকল্পিতভাবে বদলি করে আউটসোর্সিং এর চালকের হাতে গাড়ি সমঝিয়ে দেওয়া হয়। বর্তমান চালকের গাড়ি চালনা মোটেই সন্তোষজনক নয়, সাধারণ মানুষের অভিযোগ গাড়ি যে রকম অতিরিক্ত স্পিডে চলে যে কোন সময় দূর্ঘটনার আশংকা রয়েছে। সর্বশেষ সোসাল মিডিয়ায় ভাইরাল শাওন আলম নামের এক ব্যাক্তি লিখেছেন ভাইকে নিয়ে জৈন্তাপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে চিকিৎসার পরিবর্তে এখন জীবন বিপন্ন। এছাড়াও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরো বিভিন্ন রকম অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।
এব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আমিনুল হক সরকার’র সাথে আলাপকালে তিনি বলেন সিনিয়র স্টাফ নার্সরা যদি জরুরী বিভাগে রোগী না দেখেন তালে আমি জরুরী বিভাগ চালাব কিভাবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন আমরা বার বার চিঠি লিখেছি কোন কাজ হচ্ছে না।