• ১১ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ২৮শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ৩রা জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

ভোট আর পেছাবে না

Daily Jugabheri
প্রকাশিত নভেম্বর ১২, ২০১৮

যুগভেরী ডেস্ক: জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার দাবি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে বসার আগেই কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নির্বাচনের তারিখ আর পেছানোর সুযোগ নেই। গতকাল রোববার রাজধানীর নির্বাচন ভবনে রিটার্নিং অফিসারদের ব্রিফিং অনুষ্ঠানে কমিশনের পক্ষ থেকে এ কথা বলা হয়েছে।
এই নির্বাচনে কোনো প্রার্থী দ-প্রাপ্ত হয়ে আপিল করলেও তাঁর মনোনয়নপত্র বাতিল করার নির্দেশনা দিয়েছে কমিশন। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ওই প্রার্থী রিটার্নিং অফিসারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনের কাছে আপিল করলে কমিশন এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। এ ছাড়া নির্বাচনে জেলা পরিষদ ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানরা স্বপদে থেকে প্রার্থী হতে পারবেন কি না, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট আইন-কানুন দেখে আপাতত রিটার্নিং অফিসারদেরই সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়েছে।
এদিকে রাজনৈতিক দলগুলোর দলীয় কাৎসলয় থেকে দলের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করার সময় মিছিল, শোডাউন যে নির্বাচনী আচরণবিধির লঙ্ঘন অবশেষে সেটা উপলব্ধি করেছে নির্বাচন কমিশন। গতকাল এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে সহকারী রিটার্নিং অফিসারদের ব্রিফিং অনুষ্ঠানের কারণে আজ সোমবার দুপর ১২টায় নির্বাচন কমিশন সময় দিতে পারবে না। বৈঠক হতে পারে বিকেল সাড়ে ৩টায়।
রিটার্নিং অফিসারদের (মূলত জেলা প্রশাসক) ব্রিফিং অনুষ্ঠানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা বলেন, ‘৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচনের দিন নির্ধারিত হয়েছে। এরপর আর তারিখ পেছানোর সুযোগ নেই। এর প্রথম কারণ হলো জাতীয় পৎসয়ে এত বড় একটি নির্বাচনের পর আগামী ২৯ জানুয়ারিই সংসদ বসতে হবে। ফলে আমাদের হাতে বাড়তি কোনো সময় নেই। নির্বাচনের পর ফলাফল আসবে। এরপর ফলাফলের গেজেট প্রকাশ করতে হবে। এই ৩০০ আসনের ফলাফলের গেজেট করার জন্য সময় লাগে। দ্বিতীয়ত, টঙ্গীতে ইজতেমা হবে জানুয়ারির ১১ তারিখে। আমাদের চিঠি দিয়ে এটা জানানো হয়েছে। এ সময় সারা দেশ থেকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের আনতে হয়, যাতে কোনো সহিংসতা না ঘটে।’
সিইসি বলেন, ‘নির্বাচনের জন্য ৩০ তারিখও (৩০ ডিসেম্বর) যথেষ্ট সময় নয়, আরো সময় নেওয়া দরকার ছিল। কিন্তু আমরা সেটি করতে পারিনি। খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের বড়দিনসহ বিভিন্ন বিষয় মাথায় রেখে ২৩ তারিখ নির্বাচনের বিষয়টি পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু যেহেতু নির্বাচনে সব দল অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। আমরা খুশি হয়েছি। সময় কিছুটা পেছানো হয়েছে। তবে ভোটের তারিখ আর পেছানোর সুযোগ নেই।’
রিটার্নিং অফিসারদের উদ্দেশে সিইসি বলেন, ‘আপনারা দেশি-বিদেশি সব স্তরের পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। এ বছর নির্বাচনের পরিবেশ হবে ভিন্ন। আমাদের দেশে কখনো রাষ্ট্রপতিশাসিত পরিস্থিতিতে নির্বাচন হয়েছে, কখনো সেনাবাহিনী, কখনো কেয়ারটেকার সরকারে অধীনে নির্বাচন হয়েছে। সেসব নির্বাচন থেকে এই নির্বাচন সম্পূর্ণ ভিন্ন। সংসদ বহাল এবং দলীয় সরকার থাকা অবস্থায় এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ২০১৪ সালে এমন একটি নির্বাচন হয়েছিল। কিন্তু সেই নির্বাচনে সব দল অংশ নেয়নি। আমরা আনন্দিত যে এবারের নির্বাচনে সব দল অংশ নিতে যাচ্ছে। সে কারণে আপনাদের দায়িত্ব অনেক বেড়ে গেছে।’
এখন থেকে নির্বাচনের সব দায়িত্ব রিটার্নিং অফিসারদের জানিয়ে সিইসি বলেন, ‘নির্বাচন হতে হবে সম্পূর্ণ অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ। ভোট একটি উৎসব। ভোটের দিন ভোটাররা আনন্দমুখর পরিবেশে ভোট দিতে যাবে। সবাই নিজ নিজ দায়িত্ব যথাযথ পালন করবেন। ভোটের বুথ ছাড়া বাকি সব স্থানে পর্যবেক্ষকসহ সবাই যেতে পারবেন এবং নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন। যে নির্বাচন জনগণ গ্রহণ করবে, যে নির্বাচন সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবেÍসেটিই হবে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। এই অবস্থা আপনাদের সৃষ্টি করতে হবে। কিভাবে প্রিসাইডিং অফিসার নিয়োগ করবেন, ভোটকক্ষ তৈরি করবেনÍ সব দায়িত্ব আপনাদের। আপনারা সবাই যদি আন্তরিকভাবে নির্বাচন পরিচালনা করেন, তাহলে সামগ্রিকভাবে আমাদের ওপর জনগণের সন্দেহ হবে না।’
সিইসি আরো বলেন, ‘এ নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের অনেকেই এমপি বা এমপি ছিলেন। আবার অনেকে এমপি না হলেও তাঁরা এলাকায় সম্মানিত ব্যক্তি। তাঁদের সঙ্গে যদি সুসম্পর্ক রাখেন, তাহলে কেউই নির্বাচনে সমস্যা সৃষ্টি করবে না। তাঁদের কখনো প্রতিপক্ষ হিসেবে নেবেন না। তাঁদের সহযোগিতা করলে তাঁরাও আপনাদের সহযোগী, বন্ধু হিসেবে কাজ করবেন, বিরোধিতা করবেন না। নিরপেক্ষতা হবে একমাত্র মাপকাঠি।’
অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার নির্বাচনীব্যবস্থাকে পাঁচটি ‘নি’ দিয়ে সংজ্ঞায়িত করেন। তিনি বলেন, “প্রথম ‘নি’ হচ্ছে নিশ্চয়তা। এটি নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার নিশ্চয়তা। এ নিশ্চয়তার অর্থ ভোটার ও রাজনৈতিক দলে আস্থা সৃষ্টি। দ্বিতীয় ‘নি’ হচ্ছে নিরপেক্ষতা। নির্বিঘ্নে ভোট প্রদান ও ভোট কার্যক্রম চালানোর প্রতিশ্রুতি। কমিশনের পক্ষে এই নিরপেক্ষতা অপরিহার্য। তৃতীয় ‘নি’ হচ্ছে নিরাপত্তা। এই নিরাপত্তা ভোটার, রাজনৈতিক দল ও অন্যান্য অংশীজনের নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি। এ বিষয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কার্যকরভাবে নির্বাচনকালে কমিশনের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধায়নে আনা অপরিহার্য। চতুর্থ ‘নি’ হচ্ছে নিয়ম-নীতি। নির্বাচনসংশ্লিষ্ট সবাইকে কঠোরভাবে বিধিবিধান প্রতিপালনের আওতায় আনা প্রয়োজন। আর পঞ্চম ‘নি’ হচ্ছে নিয়ন্ত্রণ। নির্বাচন অবশ্যই নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে থাকতে হবে। স্বনিয়ন্ত্রণই নির্বাচন কমিশনের মূল কথা। নির্বাচনীব্যবস্থাপনায় নিশ্চয়তা, নিরপেক্ষতা, নিরাপত্তা, নিয়মনীতি ও নিয়ন্ত্রণ কমিশনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য আমরা প্রস্তুত রয়েছি।”
নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদের সভাপতিত্বে ব্রিফিং অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম ও কবিতা খানম, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাইদুল ইসলাম।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ব্রিফিংয়ের সময় রিটার্নিং অফিসারদের পক্ষ থেকে কমিশনের কাছে জানতে চাওয়া হয়, কোনো প্রার্থী আদালত থেকে দ-প্রাপ্তির পর উচ্চ আদালতে সে দ-ের বিরুদ্ধে আপিল করলে তাঁর মনোনয়নপত্র গ্রহণ করা যাবে কি না। এর জবাবে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনায় আপনারা মনোনয়নপত্র বাতিল করে দেবেন। এরপর ওই প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচন কমিশনে আপিল হলে কমিশনই সিদ্ধান্ত নেবে।’
রিটার্নিং অফিসারদের পক্ষ থেকে কমিশনের কাছে আরো জানতে চাওয়া হয়, এ নির্বাচনে জেলা পরিষদ ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানরা স্বপদে থেকে প্রার্থী হতে পারবেন কি না। এর জবাবে কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, সংশ্লিষ্ট আইন-কানুন দেখে এটা বলা যাবে। তবে এ বিষয়ে আপাতত রিটার্নিং অফিসারদেরই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
আজ থেকে সহকারী রিটার্নিং অফিসারদের ব্রিফিং : আজ বুধবার থেকে নির্বাচন কমিশন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পর্কে করণীয় বিষয়ে দেশের সব সহকারী রিটার্নিং অফিসারদের ব্রিফ করতে যাচ্ছে। রাজধানীর নির্বাচন ভবনে আজ ব্রিফিং হবে ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের সহকারী রিটার্নিং অফিসারদের জন্য। এরপর আগামীকাল বুধবার সিলেট, চট্টগ্রাম ও বরিশাল এবং বৃহস্পতিবার রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা বিভাগের সহকারী রিটার্নিং অফিসারদের ব্রিফ করা হবে।
ইসির সঙ্গে ঐক্যফ্রন্টের বৈঠক আজ : একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল বিষয়ে আজ বুধবার বিকেল সাড়ে ৩টায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) বৈঠক হবে। ঐক্যফ্রন্ট ভোটের তারিখ পিছিয়ে দেওয়ার দাবি করছে।
নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ গতরাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, ঐক্যফ্রন্ট দুপুর ১২টায় বসতে চেয়েছিল, কিন্তু এ সময় সহকারী রিটার্নিং অফিসারদের জন্য ইসির ব্রিফিং অনুষ্ঠান থাকায় তাদের বিকেল সাড়ে ৩টায় সময় দেওয়া হয়েছে।
ঐক্যফ্রন্ট গতকালই প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) বরাবর চিঠি দেয়। ফ্রন্টের মুখপাত্র ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে জানানো হয়, বুধবার দুপুর ১২টায় আলোচনায় বসতে চায় ঐক্যফ্রন্ট। আলোচনায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্ব দেবেন কামাল হোসেন। সঙ্গে থাকবেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আ স ম আব্দুর রব, খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, আব্দুল কাদের সিদ্দিকী, মোস্তফা মহসিন মন্টু, মাহমুদুর রহমান মান্না, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ, সুব্রত চৌধুরী, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, মোকাব্বির খান, এস এম আকরাম ও আবদুল মালেক রতন।
চিঠিতে বলা হয়, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে তফসিল ঘোষণার রেওয়াজ ছিল। নির্বাচন কমিশন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার ক্ষেত্রে এই রেওয়াজ মানেনি। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের সংলাপ শেষ হওয়ার আগেই তড়িঘড়ি করে নির্বাচন কমিশন একতরফাভাবে তফসিল ঘোষণা করে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তফসিল এক মাস পেছানোর দাবি করলেও সরকারের পরামর্শক্রমে নির্বাচন সাত দিন পিছিয়ে পুনঃ তফসিল ঘোষণা করা হয়। এ ক্ষেত্রেও রাজনৈতিক দল বা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে কোনো আলোচনা করা হয়নি। এই অবস্থায় সবার অংশগ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের স্বার্থে আমরা ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের নিয়ে ১৪ নভেম্বর দুপুর ১২টায় আপনার দপ্তরে এসে নির্বাচনের তফসিলসহ সামগ্রিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি।’

সংবাদটি শেয়ার করুন