• ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৭ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সিকৃবির গবেষকদের সাফল্য : হাওরে সবজি চাষে নিরব বিপ্লব

Daily Jugabheri
প্রকাশিত মে ২১, ২০২১
সিকৃবির গবেষকদের সাফল্য : হাওরে সবজি চাষে নিরব বিপ্লব

যুগভেরী ডেস্ক :::
হাওর এলাকার উর্বর মাটি সবজি চাষের জন্য খুব উপযোগী। বর্ষার পানি সরতে কিছুটা বিলম্ব হলেও বাড়ির আঙ্গিনার উচুঁ জমি থেকে দ্রত পানি সরে যায়। এসব উঁচু স্থানে শীতকালীন সবধরনের শাকসবজি চাষ করা যায়। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের উদ্যোগে পরিচালিত “সমন্বিত খামার ব্যবস্থা গবেষণার মাধ্যমে হ্ওার অঞ্চলে খামারের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি” শীর্ষক প্রকল্পের মাধ্যমে উচুঁ জমিতে সবজি চাষের উদ্যোগ নেয়া হয়। ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে প্রকল্পের কাজটি শুরু হয়, যার সুফল বর্তমানে হাওরের কৃষকরা ভোগ করছেন। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ ও প্রকাশনা দপ্তরের উপ-পরিচালক খলিলুর রহমান ফয়সাল জানিয়েছেন, দক্ষিণ সুনামগঞ্জের জয়কলশ ইউনিয়নের নোয়াগাও এলাকায় এর কার্যক্রম শুরু হয়। নোয়াগাও গ্রামের ১৫৬ জন কৃষকের মধ্যে শতকরা ২৬ ভাগ কৃষক সবজি চাষ করতেন। ২০২১ সালে সেটি শতভাগ হয়েছে এবং ছড়িয়ে পড়েছে পার্শ্ববর্তী হাওরবেষ্টিত গ্রামগুলোতে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাওরপাড়ের কৃষকেরা এখন বসতবাড়ির আশেপাশে শীতকালীন শাকসবজি যেমন লাউ, মিষ্টি কুমঁড়া, শিম, বরবটি, ফুলকপি, বাধাঁকপি, স্কোয়াশ, টমেটো, লাল শাক, পালং শাক, মূলাসহ বিভিন্ন সবজি চাষ করছেন। বাড়ির আশেপাশের কান্দা জমিতে (অপেক্ষাকৃত উচুঁ জমি) শীতকালীন সবজি চাষ করা খুবই লাভজনক। গবেষণায় দেখে গেছে, স্কোয়াশ বিদেশী সবজি হলেও সুনামগঞ্জের হাওরের মাটিতে এর ফলন চমকপ্রদ। হাওরের পলিমাটিতে এখন ব্যবসায়িক ভিত্তিতে স্কোয়াশ চাষাবাদের প্রসারতা বৃদ্ধি পাচ্ছে ও বাজারজাত করা হচ্ছে। কান্দা জমিতে স্কোয়াশসহ যেকোন সবজি চাষ করা লাভের মুখ দেখছে কৃষক। প্রতিটি চাষী পরিবারে খাদ্য উৎপাদন এবং পুষ্টি নিরাপত্তা বেড়েছে।
গ্রীষ্মকালেও বাড়ির আঙ্গিনার জমি ব্যবহার করে সবজি উৎপাদন সম্ভব, বলে জানিয়েছেন প্রকল্পের গবষেণা সহযোগী ও বর্তমানে সিকৃবির উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের প্রভাষক মান্না সালওয়া পড়শি। তিনি বলেন, “বর্ষা শুরুর আগেই করলা, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, চালকুমড়াঁর বীজ রোপন করতে হয়। এভাবে বাড়ির আঙ্গিনায় সারা বছর সবজি চাষ করা যায়।” প্রকল্পের সুবিধাভোগী খামারগুলো পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বর্তমানে প্রতিটি খামার সারা বছরে গড়ে প্রায় ৪৫৫৯০/- টাকা আয় করছে। সমন্বিত খামার ব্যবস্থা গবেষণার প্রকল্পের আগে এ সকল পরিবারের সবজি চাষে বার্ষিক আয় ছিল মাত্র ২১৪/- টাকা। রবিশস্য আবাদে কৃষকেরা আগ্রহী হয়ে উঠেছে। বর্তমানে প্রকল্প গ্রামে শুষ্ক মৌসুমে হাওরের প্রতিটি বাড়ি একটি খামার হিসেবে চিত্রায়িত হচ্ছে।
“সমন্বিত খামার ব্যবস্থা গবেষণার মাধ্যমে হ্ওার অঞ্চলে খামারের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি” প্রকল্পটির নেতৃত্ব দিয়েছেন, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. মোঃ আবুল কাশেম, মাইক্রোবায়োলজি ও ইমিউনোলজি বিভাগের প্রয়াত প্রফেসর ড. আবু বকর সিদ্দিকি, কৃষি অর্থনীতি ও পলিসি বিভাগের প্রফেসর ড. জসিম উদ্দিন আহমদ, কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ বিভাগের প্রফেসর ড. মোঃ শহীদুল ইসলাম। গবেষণায় সহযোগী হিসেবে ছিলেন মান্না সালওয়া, মামুন খান, নাসিমা বেগম, জয়নাল আবেদীন প্রমুখ। পিএইচডির ছাত্র হিসেবে এই প্রকল্পে আরো যুক্ত ছিলেন প্রফেসর ড. মোঃ আব্দুল আজিজ এবং ড. তপন কুমার সাহা। গবেষক প্রফেসর ড. মোঃ আবুল কাশেম বলেন, প্রকল্পটি শুরুর আগে এ অঞ্চলের কৃষকদের বার্ষিক আয় ছিলো প্রায় ৫০ হাজার টাকা। প্রকল্পটি সমাপ্তির পর সে আয় দাঁড়িয়েছে ২ লক্ষ ৬৭ হাজার টাকা। শুধু সবজি নয়, অন্যান্য শস্য, হাঁস-মুরগী, ভেড়া, মাছ ইত্যাদি সমন্বিত চাষের ফলে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন