রক্তে রাঙানো দিনগুলো ১-মে ১৮৮৬। শনিবার। সমগ্র শিকাগো শহর নিস্তব্ধ। চালু নেই কোনো কল-কারখানা। মিছিলের প্রস্তুতি নিচ্ছে ধর্মঘটী শ্রমিকরা। মিছিল যাবে মিশিগান এভিনিউ দিয়ে লেক ফ্রন্টের দিকে। ছয় লাখ শ্রমিক জড়ো হয়েছে। তালা ঝুলছে ১৫৭২টি শিল্প প্রতিষ্ঠানে।সরকার, মালিকগণ এবং কাগজওয়ালাদের সব রকম প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে শান্তিপূর্ণ মিছিল এগিয়ে চলেছে মিশিগান এভিনিউর দিকে। শ্রমিক নেতা পারসনস ও স্পাইজের নেতৃত্বে। লেক ফ্রন্টে প্রায় এক লাখ শ্রমিকের সমাবেশে সাফল্যের জন্য শ্রমিকদের অভিনন্দন জানালেন।কিন্তু ৩-মে সোমবার আবার কারখানায়-কারখানায় শুরু হলো ধর্মঘট। উসকানি ও সন্ত্রাসমূলক কার্যকলাপ দ্বারা শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনকে নস্যাৎ করার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে সরকার ও মালিক পক্ষ। ম্যাক কর্মিক হারভেস্টার নামক লকআউট কারখানার সামনে সমবেত শ্রমিকদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পুলিশ গুণ্ডারা। ঘটনাস্থলেই নিহত হয় ছয়জন শ্রমিক,আহত হলো অগণিত শ্রমিক। এই নির্মম হত্যাকাণ্ড ও সন্ত্রাসের প্রতিবাদে শিকাগোর হে মার্কেটে প্রতিবাদ সভা ডাকা হলো ৪ মে। গত দিনের শ্রমিক হত্যার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অভূতপূর্ব জনসমাবেশ ঘটল। ঘাবড়ে গেল মালিক পক্ষ। তখন রাত প্রায় ১০টা। শান্তি ও শৃঙ্খলার নামে জনসভা তখনই ভেঙে দেয়ার নির্দেশ নিয়ে উপস্থিত হলেন শিকাগো পুলিশের বড় কর্তা। প্রতিবাদ করলেন শ্রমিক নেতারা। পুলিশের সাথে শ্রমিক নেতাদের কথা কাটাকাটির সুযোগ গুণ্ডারা সভার বিভিন্ন অংশে বোমা ফাটাতে শুরু করে। শুরু হয় পুলিশের লাঠিচার্জ ও গুলি। ভিড়ের মধ্যে একটি বোমা এসে পড়ে এবং তার আঘাতে নিহত হন একজন সার্জেন্ট। সাথে সাথেই বেধে যায় লড়াই। রক্তের বন্যা বয়ে যায় হে মার্কেটে। এই দিনে নিহত হয় সাতজন পুলিশ, চার জন শ্রমিক। স্পাইচ এবং ফিল্ডেনকে সভাস্থলেই গ্রেফতার করা হয়, দাঙ্গা-হাঙ্গামার দায়ে। আরো গ্রেফতার হলেন মাইকেল মোয়া, জর্জ এঞ্জল, এডলফ ফিশার, লই কিং ও অস্কার নীবে।
মো মনির হোসেন
প্রকৌশলী ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা
monirece.siu@gmail.com